আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার সমাবেশ ঘিরে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। রাজপথ দখলে রাখতে দুই দলই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। অজানা আশঙ্কা এখন সর্বমহলে। সবার কাছে এখন প্রশ্ন, কী ঘটতে যাচ্ছে ২৭ জুলাই।
পুলিশ বলছে, তারাও প্রস্তুত। বিশৃঙ্খলা দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের এমন কঠোর ঘোষণার পরও নাশকতার আশঙ্কা করছে বিএনপি। তবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ বলছে, যে কোনো মূল্যে রাজপথ দখলে রাখা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তাপ বাড়ছে। সাংগঠনিক শক্তির জানান দিচ্ছে প্রধান দুই দল। একই দিনে প্রধান দুটি দলের সমাবেশের জন্য রাজধানী ঢাকা কতটা উপযুক্ত সে বিষয়টি ভাবার দাবি রাখে। সবকিছু ছাপিয়ে তাদের প্রত্যাশা, রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা দক্ষ হাতে সবকিছু মোকাবিলা করবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রীতিমতো যুদ্ধের দামামা বাজতেছে। উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে দুই দলের মাঝেই। তাদের এমন আচরণে বোঝা যাচ্ছে, সংঘাত অপরিহার্য। তবে এসব উত্তাপ-উত্তেজনা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করতে পারে। জনগণের স্বার্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসবের সমাধান করা উচিত। নইলে পরিস্থিতি যেভাবে-যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।
তবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হারুন-অর রশিদ বলেন, কী হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। সরকার এখন পর্যন্ত সহনশীল আছে। আর বিএনপিও যে সহজেই সংঘাতে জড়াবে এমনটাও মনে হয় না। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই স্মায়ুচাপ বাড়বে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ডেমোনেস্ট্রেশন করলে বাধা নেই। কিন্তু যখনই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, তখনই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশের বিষয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শিগগিরই মতামত জানাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন সাংবাদিক বিএনপির মহাসমাবেশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের আপত্তি সেখানেই, যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। আমাদের আপত্তি সেখানেই, রাস্তাঘাট বন্ধ করে যদি তারা কিছু করে কিংবা জানমালের ক্ষতি করে কিংবা জীবননাশ হয়। তখনই বাধা দেব। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ডেমোনেস্ট্রেশন করলে কোনো বাধা নেই।
রাজপথ দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। মাঠে সক্রিয় থাকবেন। সংঘাতে জড়াবেন না। তবে যারা সংঘাত করতে আসবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে রাজপথ দখলের কোনো সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা আসার পথে যেন কোনো রাস্তায় বসে না পড়তে পারে সে জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন দলটি। শান্তি সমাবেশ ছাড়াও পুরো ঢাকা মহানগরী এবং আশপাশের জেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই বিএনপির কোনো উসকানির ফাঁদে পা না দিতে ইতোমধ্যে সবাইকে সতর্ক করেও দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী ২৭ তারিখের সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সংঘাতের আশঙ্কা নেই। কোনো উসকানি আওয়ামী লীগ দেবে না। সংঘাতের উসকানি আমরা কখনো দেব না। আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দেশ চালাতে চাই। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তবে কেউ জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করলে নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। তিনি দাবি করেন, আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছি না। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে ছিলাম, আমরা মাঠে থাকব।’
পাল্টা কর্মসূচির কথা অস্বীকার করা হলেও গত বছর থেকে রাজধানী ও জেলায় জেলায় বিএনপির উল্লেখযোগ্য সব কর্মসূচির বিপরীতে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। ‘শান্তি সমাবেশ’ কিংবা উন্নয়ন-শান্তি শোভযাত্রাসহ নানা নামে রাজধানীসহ সারা দেশে রাজপথে সতর্ক অবস্থানে ছিল দলটি। কখনো মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, আবার কখনো সম্মিলিতভাবে রাজধানীতে নিজেদের শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতে বিশাল বিশাল গণজমায়েত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশের দিনও রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই দিন দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে। এ সমাবেশ সফল করতে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত স্থান পরিবর্তন হতে পারে।
গতকালও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের দিনে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তি দেখাবে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই দিন রাজধানীতে লাখো নেতা-কর্মীকে নিয়ে শান্তি সমাবেশের ব্যানারে দলটির তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে তাদের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করবে। পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস প্রতিহত করতে ওই দিন ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা।
নাশকতার আশঙ্কা বিএনপির : সরকারের পদত্যাগে এক দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল ২৭ জুলাই রাজধানীর মহাসমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা করছে বিএনপি। তারা বলছে, নাশকতার জন্য বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচির দিনেই কেন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে? বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দেয়, সেদিন কোনো না কোনো লীগও কর্মসূচি ঘোষণা করে। আর কোনো লীগ যদি না থাকে, তখন পুলিশ লীগ তো আছেই। তারা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালায়।
জানা যায়, মহাসমাবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে যুগপৎ কর্মসূচি দেবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে সভা-সমাবেশ ও অফিস চলাকালীন দিনগুলোয় অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন নেতারা। এক্ষেত্রে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাত বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে কর্মসূচির ধরন পাল্টে যাবে। তবে ‘লাগাতার কর্মসূচি বা অঘোষিতভাবে বসে পড়ার’ কোনো সম্ভাবনা নেই। সিনিয়র নেতারা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সরকারকে বাধ্য করতে ও রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে মহাসমাবেশের পরের দুই দিন সভা-সমাবেশ, ৩০ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে। তবে কর্মসূচিতে আঘাত এলে অবস্থান কর্মসূচির ক্ষেত্রে চারদিক থেকে সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাওসহ নানা সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের কর্মসূচি থাকতে পারে।
জানা যায়, ২৭ জুলাই রাজধানীর মহাসমাবেশে নেতা-কর্মীদের ঢল নামাতে চায়। এ কর্মসূচিকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন দলটির হাইকমান্ড ও নীতিনির্ধারকরা। দলটির নেতারা মনে করেন, রেকর্ডসংখ্যক লোকসমাগম নিশ্চিত করা গেলে সরকার পতন আন্দোলনে দলটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। অনেকেই তাদের আন্দোলনে শামিল হবেন, যা এক পর্যায়ে গণ-আন্দোলনের রূপ পাবে। পাশাপাশি দেশের প্রায় সব দল ও বেশির ভাগ মানুষ সরকারের পদত্যাগে রাজপথে নেমে এসেছে, এমন একটি বার্তাও যাবে সারা বিশ্বে। কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতা-কর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীনরা হামলা চালালে কিংবা বাধা দিলে সেটাকে কাজে লাগাবে বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেওয়া হবে, যা সাধারণ মানুষেরও সমর্থন পাওয়া যাবে।
দলটির নেতারা মনে করেন, এবার ঢাকাকে দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে সে লক্ষ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সারা দেশে কর্মসূচি না দিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের রাজধানীতে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া শনিবার তারুণ্যের সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগ থেকে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর রাতেই চার বিভাগের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির হাইকমান্ড। ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের আগে তাদের এলাকায় না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যুবলীগ তাদের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে গেছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে তারা এটা করেছে, তা পরিষ্কার। কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিশৃঙ্খলা করলেই ব্যবস্থা : দুই মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। সমাবেশের দিন রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থার অন্তত ১৫ হাজার সদস্য তৎপর থাকবে। যদিও গতকাল পর্যন্ত দুই দলের কাউকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার শর্তে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবারের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুনসন্ত্রাসের আশঙ্কা প্রকাশ করে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ঘটনায় মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দফতরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সভা-সমাবেশ বাড়ছে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুনসন্ত্রাসের পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এ জন্য সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্পর্শকাতর ঘটনাগুলো ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনোভাবে পরিস্থিতির অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সমাবেশ ঘিরে গুজবসহ সাইবার স্পেসে যে কোনো ধরনের অপরাধ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাইবার প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘটনার গুজব ছড়িয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য তৎপর রয়েছে পুলিশ।
যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সতর্ক রয়েছে জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে র্যাবের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। সাইবার জগতেও চলছে আমাদের নিয়মিত প্যাট্রোলিং। রাজধানীবাসীকে নিরাপদে রাখতে অতীতের মতো র্যাবের প্রতিটি সদস্য তাদের সর্বোচ্চটাই করবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ : ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ২৭ জুলাই ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীমের বক্তব্য প্রদানকালে পুলিশের বাধা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন। ওইদিন দুপুর আড়াইটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট সংলগ্ন স্থানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহীদুল ইসলাম কবির এ তথ্য জানিয়েছেন।