রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংকটের গভীরতা: ৭৯টি ট্রেন বন্ধ, সেবা উন্নয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তা

রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংকটের গভীরতা: ৭৯টি ট্রেন বন্ধ, সেবা উন্নয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তা

বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ আজ ৭৯টি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য একটি বিশাল ভোগান্তি সৃষ্টি করছে না, বরং দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে রেলওয়ের ইঞ্জিন এবং কোচের অপ্রতুলতা। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা না থাকায়, ইঞ্জিন এবং কোচ আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে, যা অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এছাড়া, রেলপথের সম্প্রসারণ, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ জনবল নিয়োগের অভাবে রেল সেবা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ২৭৫টি ট্রেন চলাচল করলেও, এ সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং ৭৯টি ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বন্ধ ট্রেনের মধ্যে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুট রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং রাজবাড়ী। বিদেশী সাহায্য না পেলে, রেলের জন্য নতুন ইঞ্জিন কেনা বা কোচ বাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন যে, নতুন ইঞ্জিনের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তবে তাও অর্থায়ন না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, “এডিবির অর্থায়নে মিটারগেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে, তবে এটি বাস্তবায়িত হতে কমপক্ষে ২-৩ বছর সময় লাগবে।”

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রেল বিভাগের গাফিলতির কারণে এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশের রেলওয়ের পরিকল্পনায় কিছু মৌলিক দিক, যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং আধুনিক কোচের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান অবস্থা এমন, যেখানে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক পরিবহন সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রেল, এবং এই সেবার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

রেলপথ সম্প্রসারণ এবং আধুনিক রেল সেবা চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও, তাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সঠিক পরিচালনা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা ইঞ্জিন, কোচ, রেললাইন উন্নয়ন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেননি, যার ফলে রেল যোগাযোগের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে বাংলাদেশের রেলওয়ে একসময় সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়বে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ