বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে ভারসাম্যের অভাব এবং একতরফা শাসনের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঠিক এই সময়েই ভারতের কূটনৈতিক ক্যালকুলেশনে বিএনপি উঠে এসেছে নতুন করে। তবে দিল্লি যে বার্তাটি বিএনপির প্রতি স্পষ্টভাবে দিচ্ছে, সেটি হলো—জামায়াতকে বাদ না দিলে কোনো সম্পর্ক নয়।
বিএনপি এখন দিল্লির সামনে সম্ভাব্য ‘পছন্দ’
দিল্লিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তাতে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠন হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাও উঁকি দিচ্ছে। যেহেতু আওয়ামী লীগ তাদের বহু বছরের কৌশলগত অংশীদার হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা বিচ্ছিন্ন, সেহেতু বিকল্প হিসেবে বিএনপি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
তবে দিল্লির কাছ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন পেতে হলে বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা সত্যিই জামায়াত থেকে দূরে সরে এসেছে। এটি কেবল রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের একটি অংশ।
ভারতের অভ্যন্তরে বিএনপিকে ঘিরে আলোচনার উত্থান
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করছেন, অতীতের ভুল শুধরে বিএনপি এখন যদি ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তবে ভারতের পক্ষ থেকেও নতুন করে ভাবা সম্ভব। একটি পরস্পরনির্ভরশীল অঞ্চল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ভারতের কৌশলগত স্বার্থেও গুরুত্বপূর্ণ।
রিভা গাঙ্গুলি দাসের মতে, “বিএনপি নিজেই এখন জামায়াতের সঙ্গে জোট অস্বীকার করছে। এটা ইতিবাচক লক্ষণ।” এই বক্তব্য এটাই নির্দেশ করে যে ভারতের পর্যবেক্ষক মহল বিষয়টি গভীরভাবে অনুসরণ করছে।
অতীতের অভিজ্ঞতা শিক্ষা দিচ্ছে নতুন কৌশল
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভারত যেভাবে সক্রিয় হয়েছিল, সেটি নতুন করে ভাবাচ্ছে অনেককে। যদিও এরপর ভারত অনেকটাই ‘হাত গুটিয়ে’ নেয়, তবুও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও মৌলবাদের উত্থান নিয়ে তারা বরাবরই শঙ্কিত থেকেছে। জামায়াতের মতো দল নিয়ে ভারতের আপত্তি কখনোই কৌশলগত সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না, বরং এটি আদর্শিক অবস্থানও।
শেষ কথা
ভারতের কর্মকর্তারা এখন যেটি বলছেন তা একদম সরাসরি—“বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চাইলে জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে।” এই বার্তাটি এখন কেবল রাজনৈতিক যোগাযোগের শর্ত নয়, বরং ভারত-বাংলাদেশ কূটনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ।
এখন দেখার বিষয়, বিএনপি কী ধরনের রাজনৈতিক কৌশল নেয়। তারা কি অতীতের বন্ধন থেকে বেরিয়ে একটি নতুন পথ গড়বে, নাকি পুরনো সম্পর্ক আঁকড়ে ধরে সম্ভাব্য একটি বড় কূটনৈতিক সুযোগ হারাবে?