গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে যখন প্রতিদিন লাশ চাপা পড়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন যুদ্ধ থামাতে আবারও মধ্যস্থতার চেষ্টায় এগিয়ে আসে মিশর। কায়রোতে প্রস্তাবিত একটি যুদ্ধবিরতির খসড়ায় উল্লেখ করা হয়—ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র হতে হবে, তবেই ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে যাবে। তবে এই শর্তকে একরকম আত্মসমর্পণের সমান বলে আখ্যা দিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস।
হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “মিশরের প্রস্তাবটি শুধু আমাদের নয়, গোটা ফিলিস্তিনি জাতির আত্মসম্মানের ওপর আঘাত। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিরোধ ত্যাগ না করলে শান্তি হবে না। এটা একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট।”
তিনি বলেন, “আমরা যেকোনো বাস্তবসম্মত আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু শর্ত থাকবে—ইসরাইলকে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, দখল প্রত্যাহার করতে হবে, এবং গাজাবাসীকে তাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অস্ত্র রাখা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার।”
এদিকে মিশর ও কাতার একযোগে যুদ্ধবিরতির একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো খুঁজে পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে আবারও জানানো হয়েছে—তারা ‘চূড়ান্ত বিজয়’ না পাওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান থামাবে না।
তেলআবিবের ভাষ্য, “হামাসকে নিষ্ক্রিয় করতে না পারলে ভবিষ্যতে ইসরাইল নিরাপদ থাকবে না। তাই অস্ত্র ফেলা, ভূগর্ভস্থ টানেল ধ্বংস, ও নেতৃত্ব স্তরকে ধ্বংস করা আবশ্যক।”
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইসরাইল এক প্রকার যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়েছিল। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আবারও সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় বোমা বর্ষণ শুরু করে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি বিমান হামলায় নতুন করে ১,৫৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪,১১৫ জনের বেশি। নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু।
এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ, শোক ও প্রতিরোধ মনোভাব আরও দৃঢ় হচ্ছে। হামাস বারবার বলছে, “এই লড়াই অস্তিত্বের লড়াই। আমরা অস্ত্র ফেলব না, কারণ ইসরাইল শুধু অস্ত্র চায় না—চায় আমাদের মুছে ফেলতে।”
এই রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটের পটভূমিতে মিশরের নতুন প্রস্তাব বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, তা বাস্তবভিত্তিক সমাধানের ধারেকাছেও যায়নি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।