ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি ইসলামের পবিত্রতম ভূমিগুলোর অন্যতম। এটি সেই অঞ্চল যেখানে বহু নবী-রসূল পদার্পণ করেছেন, সেখানে বসবাস করেছেন এবং অনেকেই কবরস্থ আছেন। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে এই ভূমিকে আল্লাহ “বরকতময়” হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
সূরা আম্বিয়ার ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “আর আমি তাঁকে (ইবরাহিম আ.) ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।” সূরা আরাফের ১৩৭ আয়াতে আরও উল্লেখ করা হয়, “যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি।” এসব আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে— ফিলিস্তিন ও এর আশপাশের অঞ্চল আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় ও কল্যাণময় ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমীয়, সেলজুক, আইয়ূবী, মামলুক, উসমানীয় সহ বহু মুসলিম শাসনামলে বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিমদের রক্ষণাবেক্ষণে ছিল। সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর নেতৃত্বে ক্রুসেডের বিরুদ্ধে বিজয়, আল-আকসার পুনর্দখল এবং এর সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা মুসলিম ঐতিহাসিক বিজয়ের অনন্য নিদর্শন।
তবে আজকের বাস্তবতা ব্যথাতুর। ইসরাইলি দখলদারিত্ব, বসতি স্থাপন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশুহত্যা, মহিলাদের ওপর নির্যাতন ও অবরুদ্ধ গাজায় বোমা বর্ষণ ফিলিস্তিনকে এক ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত শহীদ হচ্ছেন, এবং বিশ্ব যেন নির্বিকার।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বহু দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে “মার্চ ফর গাজা” কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেখানে ধ্বনিত হয়েছে— “মুক্ত হোক ফিলিস্তিন, রক্ষা হোক আল-আকসা।” এ দাবিগুলো শুধু রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয় এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকেও উঠে এসেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি বিখ্যাত হাদিসে বলা হয়েছে, “যখন হজরত সুলায়মান (আ.) মসজিদে আকসার নির্মাণ শেষ করেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি প্রার্থনা করেন… এবং যারা নির্ভেজাল অন্তরে সেখানে এসে সালাত আদায় করবে, তাদের পাপ এমনভাবে মোচন হবে যেন তারা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।” (ইবনু মাজাহ ১৪৭৯)
এই বার্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফিলিস্তিন মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের কেন্দ্রস্থল। এটি শুধু একটি ভৌগোলিক সীমারেখা নয়— বরং এটি নবুয়তের উত্তরাধিকার, বরকতের উৎস এবং মুসলিম আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।