আমরা প্রায়ই দেখি—কারও হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, কারও হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ বা আচমকা ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। অথচ এসব সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে চলতে থাকা অদৃশ্য বিপর্যয়গুলোরই বহিঃপ্রকাশ এগুলো। এসব ঝুঁকি এড়াতে চাইলে প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
অথচ আমাদের সমাজে এখনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা মানেই বড় ধরনের অসুস্থতা ধরে নেওয়া হয়। ফলে বেশিরভাগ মানুষ কেবল অসুস্থ বোধ করলেই পরীক্ষা করান। চিকিৎসকদের মতে, এই ধারণা বদলাতে হবে।
প্রিভেনটিভ হেলথ চেকআপ: এখনকার সময়ে জরুরি:
বর্তমানে প্রতিটি মানুষকে বছরে অন্তত একবার শরীরের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখা উচিত। এতে করে অনেক অজানা রোগ আগেই ধরা পড়ে যায় এবং নিরাময়ের সুযোগও থাকে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, “শুধু বয়স বেশি হলেই নয়, অল্প বয়সে রোগ ধরা পড়ার হারও এখন বাড়ছে। তাই বয়সভিত্তিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।”
২০ বছর পার করলেই যেসব চেকআপ জরুরি:
১. সিবিসি ও ব্লাড প্রেসার টেস্ট: রক্তস্বল্পতা, সংক্রমণ বা হাইপারটেনশনের প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ে।
২. ব্লাড সুগার: ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বোঝা যায়।
৩. লিপিড প্রোফাইল: হার্টের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।
৪. থাইরয়েড পরীক্ষা: হরমোনের ভারসাম্য ও মেটাবলিক রেট বুঝতে সহায়ক।
৫. ভিটামিন ডি ও বি১২: ঘাটতি থাকলে শরীরে ক্লান্তি, হাড় দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
৬. এসটিআই স্ক্রিনিং: যৌন স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে অপরিহার্য।
৩০ পেরোলে ঝুঁকি বাড়ে, তাই পরীক্ষা বাড়ানো জরুরি:
-
ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল ও প্রেসার রেগুলার চেক: এই বয়সে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের প্রবণতা বেশি।
-
লিভার ও কিডনি ফাংশন টেস্ট: দীর্ঘদিন ওষুধ গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই অঙ্গ দুটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
-
ইউএসজি ও ইউএসিএআর: অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অবস্থা ও কিডনির কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য অপরিহার্য।
৪০-এর পর স্বাস্থ্য সচেতনতায় আরও বাড়তি মনোযোগ দরকার:
-
নারীদের জন্য প্যাপ স্মিয়ার, এইচপিভি ও ম্যামোগ্রাম: জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
-
দৃষ্টিশক্তি ও দাঁতের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দুই অংশে সমস্যা তৈরি হয়।
-
হার্ট চেকআপ: ECG, TMT, ইকো, কোলেস্টেরল লেভেল—সব নিয়মিত করাতে হবে।
-
হরমোন পরীক্ষা: নারীদের জন্য মেনোপজ-পরবর্তী হরমোন পরিবর্তন, আর পুরুষদের জন্য টেস্টোস্টেরন লেভেল জানা দরকার।
-
বোন ডেনসিটি টেস্ট: হাড় ক্ষয়ের আশঙ্কা এড়াতে এই টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বয়স বাড়া মানেই অসুস্থ হওয়া নয়—বরং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নিয়মিত নজরদারি জরুরি। একটু সচেতনতা, সামান্য কিছু পরীক্ষা আর জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা—এই তিনেই লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। আজ থেকেই নিজের বয়স অনুসারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শুরু করুন, সুস্থ থাকুন প্রতিদিন।