ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। রেডক্রস জানিয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো মৌলিক চাহিদার অভাবে গাজাবাসীর সামনে অপেক্ষা করছে গণমৃত্যুর ছবি।
১১ এপ্রিল দেওয়া এক বিবৃতিতে রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, “গাজায় অবরোধ ও যুদ্ধ মিলিয়ে এখন এমন এক অবস্থা, যেখানে মানুষ ন্যূনতম জীবনধারার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই। এ যেন পৃথিবীর এক জীবন্ত নরক।”
ইসরায়েলের অভিযোগ, ত্রাণ সামগ্রী ব্যবহার করে হামাস আবার শক্তি অর্জন করছে, তাই তারা জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সময়েই সীমিত ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গাজায় একটিও নতুন রসদ প্রবেশ করেনি।
১৮ মার্চ ইসরায়েল হঠাৎ করে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করে। এক রাতেই ৪০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। এরপর থেকে অবিরাম চলছে বোমাবর্ষণ। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের এই নতুন হামলায় ইতোমধ্যেই ১,৫০০-র বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে।
একইসঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থা একপ্রকার ধসে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অস্ত্রোপচার থেমে যাচ্ছে মাঝপথে, ওষুধ না থাকায় সংক্রমণে রোগীরা মারা যাচ্ছেন। রেডক্রস জানায়, তাদের হাতে থাকা যৎসামান্য সরবরাহ আগামী দুই সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে, যার ফলে চিকিৎসাসেবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস আক্রমণের পর থেকে গাজার ৬০% অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এ অবস্থায় মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
তবে ইসরায়েল তাদের অবস্থানে অনড়। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, মার্চে ফের আগ্রাসন শুরু করে। ফলে মানবিক পরিস্থিতি ফের ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। রেডক্রস, জাতিসংঘ, ওআইসি, আরব লীগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এখন জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক চাপ, মানবিক সাহায্য প্রবেশ এবং যুদ্ধ থামানোর ওপর। অন্যথায় ইতিহাসের এক ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি।