নতুন সন্দ্বীপ: সীমানা বিরোধের সমাধান ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

নতুন সন্দ্বীপ: সীমানা বিরোধের সমাধান ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা নতুন চরগুলির কারণে বদলে যাচ্ছে সন্দ্বীপের মানচিত্র। ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা, কাউয়ারচরসহ ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা সন্দ্বীপের ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার ফলে নতুন দ্বীপাঞ্চল গঠিত হচ্ছে। ১৯৫৫ সালের জরিপ অনুযায়ী, সন্দ্বীপের মোট আয়তন ছিল ৬০৩ বর্গকিলোমিটার, কিন্তু সাগরের গ্রাসে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮২ বর্গকিলোমিটার। তবে নতুন চরগুলির জমে ওঠা ও সন্দ্বীপের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কারণে দ্বীপটির আয়তন বর্তমানে প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন চর সন্দ্বীপের সাথে মিশে একটি বিশাল দ্বীপ গঠন করবে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর দ্বীপের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এসব চরগুলির আয়তন বাড়তে থাকায় তা সন্দ্বীপের অংশ হয়ে উঠছে।

তবে, সন্দ্বীপ-নোয়াখালীর সীমানা নিয়ে এক দীর্ঘ বিরোধ চলছিল। ২০১৭ সালে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার উরিরচর ও ভাসানচরের বেশ কিছু অংশ নোয়াখালীর হাতে দিয়ে দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সন্দ্বীপবাসী আন্দোলন শুরু করে, এবং গত বছর ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর সীমানা বিরোধটি ফের সামনে আসে। সরকারের শীর্ষ মহল দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়, এবং ১০ এপ্রিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি, সন্দ্বীপের জনগণও দীর্ঘদিন ধরে ভাসানচরকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাসানচর ও অন্যান্য চর সন্দ্বীপের অংশ হওয়া উচিত, যেহেতু সেগুলি এর ভূ-সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

সন্দ্বীপের উন্নয়নও দ্রুত এগোচ্ছে। সম্প্রতি সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে, যা দ্বীপবাসীকে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার জন্য কাদা-জলে হাঁটা থেকে মুক্তি দিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য সন্দ্বীপকে একটি “রিসোর্ট দ্বীপ” হিসেবে গড়ে তোলা, এবং ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা শুরু করেছেন।

ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর সন্দ্বীপে বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হয়েছে। সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি নুরুল আক্তার জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য দ্বীপটি এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। স্থানীয় প্রশাসনও দ্রুত সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করেছে, যাতে সন্দ্বীপে যানবাহন প্রবাহ আরও সুষ্ঠু ও সুবিধাজনক হয়।

এভাবে, সন্দ্বীপ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে সীমানা বিরোধের সমাধান, উন্নয়ন, এবং নতুন সম্ভাবনার এক যুগান্তকারী পর্বের সূচনা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ