পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানাতে এবারের উদযাপন ঢাকায় রূপ নিয়েছে এক নতুন মাত্রায়। দিনভর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর সন্ধ্যায় অভূতপূর্ব ড্রোন শো—দুইয়ের সম্মিলনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তৈরি হয় এক স্মরণীয় মুহূর্ত।
দুপুর ৩টা থেকেই বর্ণাঢ্য কনসার্টে জমে উঠতে শুরু করে নববর্ষ উদযাপন। বান্দরবানের বেসিক গিটার লার্নিং স্কুলের পরিবেশনায় সূচনা হয় এই সাংস্কৃতিক আয়োজনে। এরপর একে একে পরিবেশন করেন গারো ও আরএনআর ব্যান্ড ‘এফ মাইনর’, একক শিল্পী মিঠুন চক্র, পালাকার ইসলামউদ্দিন, রাকিব ও সাগর দেওয়ান, আতিয়া আনিশা, আহমেদ হাসান সানি এবং গুণী ওস্তাদ আরজ আলী। কনসার্টের একদম শেষ পর্বে মঞ্চ মাতান জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’।
সন্ধ্যার পরেই শুরু হয় বছরের সবচেয়ে আলোচিত আয়োজন—সর্ববৃহৎ ড্রোন শো। সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকার আকাশ জুড়ে জ্বলজ্বল করতে থাকে শতাধিক ড্রোন, যারা তৈরি করে একের পর এক প্রতীকী দৃশ্য। আলো ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি হয় আন্দোলনের মুখ, বিদ্রোহের চিহ্ন, মানবিক সংকটের বার্তা ও আশার প্রতীক।
শোতে তুলে ধরা হয় সাম্প্রতিক বাংলাদেশের গণআন্দোলনের প্রতীক ‘আবু সাঈদ’ ও ‘মুগ্ধ’কে, যারা ছাত্র-জনতার কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। পাশাপাশি ‘পায়রার খাঁচা ভাঙা’ থিমের মধ্য দিয়ে উঠে আসে স্বাধীনতার ইঙ্গিত ও বাঁধা ভাঙার বার্তা। ‘ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা’ অংশটি ছিল আন্তর্জাতিক সংকটের প্রতি বাংলাদেশের সংবেদনশীল মনোভাবের পরিচয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ ছাড়া কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই আয়োজন কেবল একটি উৎসব নয়—বরং এটি ছিল একযোগে শিল্প, প্রযুক্তি, প্রতিবাদ এবং সংস্কৃতির এক শক্তিশালী সম্মিলন, যা বাংলাদেশের নববর্ষ উদযাপনকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে।