বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর চিরচেনা লোগোতে আসছে আমূল পরিবর্তন। এবার বাদ পড়ছে বহুদিনের পরিচিত পালতোলা নৌকা, যা এতদিন বাহিনীর চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। নতুন নকশায় উঠে আসছে দেশের কৃষি ও জাতীয় পরিচয়ের উপাদান—শাপলা, ধান ও গমের শীষ এবং পাটপাতা।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক অফিসিয়াল চিঠিতে (যেটির স্বাক্ষর করেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি নাছিমা বেগম) এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারির পর নতুন লোগোটি দেশের সব জেলা ও ইউনিটে বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর করা হবে। এর আওতায় পড়বে পুলিশের ইউনিফর্ম, পতাকা, ব্যাজ, যানবাহন, অফিসের সাইনবোর্ড ও কাগজপত্রসহ সকল সরকারিভুক্ত উপাদান।
নতুন লোগোর কেন্দ্রে একটি বড় পাটপাতা, তার ওপর স্পষ্টভাবে লেখা ‘পুলিশ’। চারপাশে রয়েছে ধান ও গমের শীষ এবং শাপলা ফুল—যা বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতির ঐতিহ্য বহন করে। এই প্রতীকগুলোকে একত্রিত করে পুলিশের নতুন ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো পুলিশের মনোগ্রামে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পরে ২০০৯ সালে বর্তমান লোগোটি চালু করা হয়, যেখানে ছিল একটি পাল বাঁধা নৌকা, দুই পাশে গম ও ধানের মালা, মাঝখানে শাপলা এবং নিচে ‘পুলিশ’ শব্দটি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ের আলোকে নৌকা প্রতীকের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, কারণ এটি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল। নতুন প্রতীকে সেই বিতর্ক এড়িয়ে একটি সর্বজনীন, সাংস্কৃতিক এবং কৃষিনির্ভর চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।
নতুন লোগো কেবল বাহিনীর প্রতীক বদলের বিষয় নয়—এটি পুলিশকে আরও আধুনিক, সর্বজনীন ও গণমুখী ভাবমূর্তিতে উপস্থাপন করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি নতুন লোগোটি পুলিশের ভবিষ্যৎ কৌশল ও পেশাদারিত্বের প্রতিফলন বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লোগো বাহিনীর মূল পরিচয়ের প্রতীক। সেই পরিচয় আরও শক্তিশালী করতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এখন দেখা যাক, এই পরিবর্তন মাঠপর্যায়ে কতটা প্রভাব ফেলে—দৃশ্যত ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে।