ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব দেশগুলোর অবস্থান একদিকে ঐক্যবদ্ধ সমর্থনের মতো শোনালেও বাস্তবতা অনেক জটিল। পবিত্র ভূমি থেকে উৎখাত হওয়া ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার ঘোষণা বহুবার শোনা গেলেও, অনেক আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। একদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতি, অন্যদিকে নিজস্ব নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থে ইসরাইলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে তারা।
জর্ডান ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেছিল। ১৯৭০ সালে পিএলও-এর সঙ্গে সংঘর্ষে দেশজুড়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ বাধে। শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের লেবাননে পাঠিয়ে দেয় জর্ডান। পরে ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সই করে।
লেবানন পিএলও-এর আশ্রয়স্থলে পরিণত হলেও, ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। ফিলিস্তিনি শিবিরে ইসরাইল-সমর্থিত গোষ্ঠীর গণহত্যা, যেমন সাবরা ও শাতিলা, ইতিহাসে নৃশংসতার প্রতীক। লেবানন সরকার এখনও ফিলিস্তিনিদের নাগরিক অধিকার না দিয়ে শরণার্থী করে রেখেছে, যাতে তারা স্থায়ী না হয়।
মিসর ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকলেও, ১৯৭৯ সালে প্রথম আরব দেশ হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিসি, হামাসের উত্থান ঠেকাতে গাজা সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে। গাজা ও সিনাইয়ের নিরাপত্তা বজায় রাখাই দেশটির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।
ইরাক এক সময় ফিলিস্তিনিদের জন্য ছিল আশ্রয় ও সুযোগের দেশ। বিনা খরচে শিক্ষা ও চাকরি ছিল সাদ্দাম হোসেন আমলে বাস্তবতা। তবে ২০০৩ সালের পর, শিয়াপন্থী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণে তারা নির্মম সহিংসতা ও বিতাড়নের শিকার হয়।
কুয়েত এক সময় পিএলও প্রধান ইয়াসির আরাফাতের সমর্থক হলেও, ১৯৯০ সালের পর ইরাক দখলের ঘটনায় আরাফাতের অবস্থানের কারণে কুয়েতে থাকা লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। থার্ডআই সিস্টেমে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামরিক প্রযুক্তিতেও পারস্পরিক সহযোগিতা শুরু করে। এই পদক্ষেপ ঐতিহ্যগত আরব ঐক্যের নীতিকে ভেঙে দেয়।
সুদান ১৯৬৭ সালে ‘থ্রি নো’ নীতির মাধ্যমে ইসরাইলবিরোধী অবস্থানে থাকলেও, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও অর্থনৈতিক চাপে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়। এর বিনিময়ে সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে লেবেল সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এইসব দ্বৈত নীতি ও বাস্তববাদী কূটনীতি দেখায়, ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরব দেশগুলোর অবস্থান একাধিক মাত্রায় বিভক্ত ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট।