শর্ত শিথিলে রাজি নয় আইএমএফ, ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা

শর্ত শিথিলে রাজি নয় আইএমএফ, ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের শর্ত শিথিল করতে রাজি হয়নি, ফলে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আরও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য আইএমএফের নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে। তবে এ শর্ত পূরণ অসম্ভব হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শর্ত শিথিলের প্রস্তাব দিলেও তা নাকচ করেছে আইএমএফ।

গত সোমবার এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের কর্মকর্তারা আইএমএফকে জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করা বর্তমান বাস্তবতায় অসম্ভব, কিন্তু আইএমএফ তাদের এ প্রস্তাবে কোনো সম্মতি দেয়নি।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা তাদের বলেছি, বাড়তি এ অর্থ আদায় করা বাস্তবসম্মত নয়। তবে আইএমএফ তাতে রাজি হয়নি।” এ পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার এনবিআরের তিন অনুবিভাগের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তাদের আবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শর্ত শিথিল না হলে ঋণের বাকি অর্থ ছাড় বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

এনবিআরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি তিন মাসে আদায় করতে হবে আরও ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য আইএমএফ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিলাসী পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া, এবং সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব।

এছাড়া, আইএমএফ প্রশাসনিক সংস্কার, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করার জন্যও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। করপোরেট কর ও রিটার্ন অনলাইনে জমার সময়সীমা নির্ধারণসহ আয়কর বিভাগের ডিজিটাইজেশন প্রকল্পের খসড়া প্রণয়নেও অগ্রগতি চাওয়া হয়েছে।

এনবিআরের সদস্য (আয়করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম বলেন, “গত অর্থবছরে আমরা কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৪ শতাংশ করেছি, কিন্তু আইএমএফ মনে করে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে বাড়তি রাজস্ব আদায় করার। এজন্য তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসেনি।”

এদিকে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের তিনটি কিস্তিতে ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার আশা করছে, জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হবে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় শর্ত পূরণের জন্য একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, শর্ত শিথিল না হলে আইএমএফের সঙ্গে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ