বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণে জলজ ফ্লাইটোপ্লাঙ্কটন নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্যেও প্রভাব পড়ছে। বায়ুতে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির তারতম্য একদিকে যেমন বায়ুমান খারাপ করে অপরদিকে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করে। ওজোন স্তর রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বায়ুমান গবেষকরা। ইউএস ফরেস্ট ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসের সহযোগিতায় বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা বলেন, ‘ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে জলজ ফ্লাইটোপ্লাঙ্কটন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব পড়ছে। জীববৈচিত্র্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কীভাবে ওজোন স্তরকে রক্ষা করা যায় সেটি গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে।’
গবেষকরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে দুই ধরনের ওজোন রয়েছে। একটি খারাপ ওজোন যা ভূপৃষ্ঠে থাকে। একে গ্রাউন্ড লেভেল ওজোন বলা হয়। অপরটি বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থাকে। এটি ওজন স্তর বা ওজোনস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এটিকে ভালো ওজোন হিসেবে ধরা হয়। মহাশূন্যের এই ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশ থেকে বাধা সৃষ্টি করে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘ওজোন গ্যাস একটি স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক হিসেবে পরিচিত এবং এটি একটি অন্যতম বায়ু দূষক। বায়ুতে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির তারতম্য একদিকে যেমন বায়ুমান খারাপ করে অপরদিকে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘সিএফসিযুক্ত এসির ব্যবহার দিনকে দিন বাড়ছে। এতে ওজোন স্তরের ক্ষয় বাড়াচ্ছে যা গণপরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম কারণ।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা পারভীন বলেন, ‘অসচেতনতামূলক কাজের মাধ্যমে আমরা ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি। চোখে ছানিসহ বিভিন্ন রকম ক্যান্সারের প্রধান কারণ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি। ওজোন হোলের মাধ্যমে এই অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
সমাপনী বক্তব্যে ক্যাপসের গবেষক মারজিয়াত রহমান বলেন, ‘ওজোন স্তরের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুধু বাংলাদেশেরই নয় এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সিএফসি গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমরা ওজোন স্তরকে রক্ষা করব, এটাই হোক আমাদের শপথ।’
ওয়াবিনারে উপস্থিত ছিলেন ইউএস ফরেস্ট ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসের কো-অর্ডিনেটর স্পেশালিস্ট মো. শামস উদ্দিন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাহমুদা ইসলাম, প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবির, সিজিইডির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওহাব।