যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করে গেছেন। প্রতিনিধি দলটির ঢাকা সফর বেশ গুরুত্ব সহকারেই দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, তাদের এই সফরের ফলে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
দলটির নেতারা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ভিসা নীতি’র পর দেশটির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন করছে তাদের এই সফরে সেটাও একধাপ এগিয়েছে। এছাড়া বিএনপি এতদিন ধরে বলে আসছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তার প্রমাণও হচ্ছে মার্কিন প্রতিনিধিদের এই সফর। কারণ অন্য কোনো দেশে তারা সফর করছে না, কেবল বাংলাদেশেই আসছে এবং নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে।।
চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ঢাকায় আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক না করলেও সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠকগুলোতে তারা আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সফরের নির্ধারিত সূচি শেষে শুক্রবার (১৪ জুলাই) ঢাকা ত্যাগ করে প্রতিনিধি দলটি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য গত ৯ জুলাই বাংলাদেশ সফরে এসেছে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। তারা এখনো বাংলাদেশে আছে।
তারা তো অন্য কোনো দেশে সফরে যাচ্ছেন না। আসছে বাংলাদেশে, কারণ এই দেশে কোনো নির্বাচন নেই, জনগণের ভোটাধিকার নেই। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটির সফরের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা তো অন্য কোনো দেশে সফরে যাচ্ছেন না। আসছে বাংলাদেশে, কারণ এই দেশে কোনো নির্বাচন নেই, জনগণের ভোটাধিকার নেই। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এই সরকারের অধীনে গত কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেই সবাই এখানে সফরে আসছেন।
তাদের সফরের কারণে সরকারের ওপর সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ আরও বেড়ে গেছে। যেটা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের কথাবার্তায় এরইমধ্যে প্রকাশও পাচ্ছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য
তিনি আরও বলেন, সবার উদ্দেশ্য একটাই, যে কারণে বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলন করছে। নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক অধিকার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করার পরে নির্বাচনের আলোচনা আসবে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তো আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের এখানে আসার দরকার ছিল না। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সফর এটাই প্রমাণ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফর বিএনপির আন্দোলনের জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ হয়েছে। তাদের সফর নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে- একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের যেসব উন্নয়ন সহযোগী আছে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যাতে আগামী দিনে একটি ভালো নির্বাচন ব্যবস্থা সরকার করতে পারে। সেই ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করবে। এর জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে এই সফর কাজ করেছে। এতে বিএনপির আন্দোলন আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।
এই নেতার দাবি, তাদের সফরের কারণে সরকারের ওপর সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাপ বেড়ে গেছে। যেটা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের কথাবার্তায় এরইমধ্যে প্রকাশও পাচ্ছে।