হাবের মধ্যস্থতায় সেই ৫৩৮ জনকে হজে পাঠানোর উদ্যোগ

রাজধানীর শ্যামপুরের এসএম ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার ৫৩৮ হজযাত্রী। তাদের প্রায় চার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এজেন্সির মালিক শাহ আলম। ফলে তাদের হজযাত্রা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এসব হজযাত্রীদের চলতি বছরই হজে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)।

সোমবার হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, হাজীদের যেকোনো বিপদে হাব সব সময় থাকে। দুই মালিক সৌদিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের অধীনে থাকা ৮২৩ জনকে ইতোমধ্যে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। এসএন ট্রাভেলসের যাত্রীদেরও হজে পাঠাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সময় যেহেতু শেষ মুহূর্তে এ জন্য অনেকটা কষ্ট হবে। তারপরও ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সৌদি দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এসএন ট্রাভেলস থেকে ৫৩৮ হজযাত্রীর হজ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে ৭৫ জনের ভিসা হয়েছে। ৯০ জনের টিকিট কনফার্ম হওয়ার পর গত বুধবার থেকে এজেন্সির মালিক শাহ আলম লাপাত্তা। এসব হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের টাকা জমা ছিল। এছাড়া সৌদি আরবের হোটেল ভাড়া প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বুকিং করা ছিল। ভিসা ফি বা অন্যান্য খরচ যা প্রয়োজন হজযাত্রীদের কোনো পরিশোধ বকেয়া থাকলে সেটা দিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করবে হাব।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এই এজেন্সি যে কাজটি করেছে তা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ, তার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। এই হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে হাব সবোর্চ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিবন্ধন, লাইসেন্স ও জামানত বাতিলের পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয় যেন এই এজেন্সি মালিককে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে সেই সুপারিশ করা হবে। তিনি যদি দেশের বাইরে পালিয়ে যান তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে এনে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তিনি জানান, এই হজ এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত সবাই হজে যেতে পারবেন। এই এজেন্সির ভুক্তভোগীরা লিখিত ও ফোনে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি নিবন্ধিত হজযাত্রীরা সবাই যেন হজ পালন করতে পারেন। এসএন ট্রাভেলসের সবাই হজে যেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

গত বুধবার থেকে রাজধানীর শ্যামপুর ও মোহাম্মদপুরে অফিসে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এসএন ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক শাহ আলমকে। এমনকি মোবাইল বা অন্য কোনো মাধ্যমেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।

অন্যদিকে, আকবর হজ এজেন্সির প্রতারণায় ৪৫ যাত্রী গত বছর হজে যেতে পারেননি। তাদের চলতি বছর হজে পাঠানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী আকবর হজ গ্রুপের দুই এজেন্সি সাবিলুল জান্নাহ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও আল-মামুন এয়ার ট্রাভেলসকে বাড়তি টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু আকবর হজ গ্রুপ শেষ মুহূর্তে তাদের হজে পাঠাতে পারবে না বলে জানায়। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি বলেন, এটা ভিন্ন ঘটনা। এ ব্যাপারে জেনে শুনে কথা বলতে চাই।

হাবের মধ্যস্থতায় সেই ৮২৩ যাত্রী এখন সৌদিতে

৯ লাখ রিয়াল নিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন কোবা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. মাহমুদুর রহমান এবং তার ছেলে ইউরো ও আহসানিয়া হজ মিশনের মালিক সাদ বিন মাহমুদ। তাদের অধীনে ৮২৩ হজযাত্রীর ১ জুন সৌদি আরবে যাওয়ার কথা। কিন্তু মালিক আটক হওয়ায় ওই তিন হজ এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত ৮২৩ জনের হজ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে হাবের মধ্যস্থতায় তাদের সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। ২, ৪ ও ১৩ জুন তিনটি ফ্লাইটে ৬৮৫ জন এবং সর্বশেষ ১৪ জুন বাকি ১৩৮ জনকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি বলেন, সৌদি পুলিশের হাতে মালিকরা আটক হওয়া পর থেকে ৮২৩ হজযাত্রীর যাত্রার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আমরা শুরু থেকে সবাইকে হজে পাঠানোর বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, মক্কা হজ মিশন ও সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ