বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর একটি—লিটন কুমার দাস। একজন ব্যাটার হিসেবে তার ব্যাটিং শৈলী যেমন মোহিত করে, তেমনি তার ধারাবাহিক ব্যর্থতা আঘাত হানে কোটি ভক্তের হৃদয়ে। লিটনের ক্যারিয়ার যেন এক গোলকধাঁধা—চেষ্টা, সাফল্য, ব্যর্থতা এবং পুনরাগমনের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা অকপটে বলেছেন লিটন। তার মতে, যেদিন তিনি ভালো খেলেন, সেদিন দল হারিয়ে যায়। ফলে তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স আড়ালে থেকে যায়। বাস্তবেও দেখা গেছে, অনেক সময় লিটনের ঝলকানির দিনে বাংলাদেশ জয় পায় না। কিন্তু কি এই একার কারণে তাকে ‘দুর্ভাগা’ বলব?
তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানগুলো বলছে, জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি প্রায় ২৫০টি ম্যাচ খেলেছেন। এত বার বাদ পড়ার পরও বারবার ফিরে এসেছেন। যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবেশ জানেন, তারা জানেন—এটা শুধুমাত্র পারফরম্যান্স নয়, এর পেছনে ভাগ্যের পরশ না থাকলে এতদূর আসা অসম্ভব। হয়তো এ কারণেই লিটনকে বলা যায় ‘সৌভাগ্যবান দুর্ভাগা’।
সমালোচনার ঝড় সবসময়ই ছিল তার পেছনে। একটা বাজে শট, একটা ফাঁকা মাথায় ফেরা—তাতে চুপ থাকা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ‘লিটন ডিসকাউন্ট’ ট্রেন্ডও চলেছে। কিন্তু তিনি হার মানেননি। বরং বারবার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। চলতি ডিপিএলে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। যে কেউ ভাবত, এই ফর্মেই হয়তো আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাজিমাত করবেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—লিটনের পথচলায় ভাগ্য যেন এক চিরস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী। পিএসএলে ডাক পেলেন, কিন্তু ম্যাচ খেলাই হলো না। অনুশীলনেই চোট, ফিরে আসতে হলো দেশে। এত পরিশ্রম, প্রস্তুতি সব যেন ম্লান হয়ে গেল এক নিমিষে। নিজেই বলেছেন, “So sadly, my mission is over before it even began.”
তবে যাকে একাধিকবার ‘কাট’ করা হয়েছে, সেও তো ফিরেছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপে। লিটনের জীবনে ব্যর্থতা যতটা বড়, প্রত্যাবর্তনের গল্পও ততটাই অনুপ্রেরণামূলক। তার ব্যাট হাসলে বাংলাদেশ হাসে। সমালোচনার বিরুদ্ধে তার দাঁড়িয়ে থাকা, নিজের দায় স্বীকার করে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাকে আলাদা করে দিয়েছে। লিটনের মতো খেলোয়াড়রা হয়তো দুর্ভাগাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন না, তারা দুর্ভাগ্যকে হারিয়েই ফিরে আসেন।