প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ইতিবাচক দেখছেন বিশ্লেষকরা

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ইতিবাচক দেখছেন বিশ্লেষকরা

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরটি দেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর, চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়ে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলে দেবে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও নতুন সম্ভাবনা

ড. ইউনূসের চার দিনের এই সফরের সময়, দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফরের ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শক্তির পাল্লা ভারী হয়েছে, যদিও প্রকৃত সুফল পেতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মন্তব্য করেন, “এটি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য একটি ইতিবাচক কাঠামো তৈরি করেছে, যা আগামীতে সম্পর্ক আরও গভীর করতে সাহায্য করবে। চীন বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে আগ্রহী, এবং এটি দেশের গণতন্ত্র, কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত।”

অধ্যাপক আহমেদ আরও বলেন, “চীনের সহায়তায় তিস্তা প্রকল্পে অগ্রগতি হতে পারে, এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও চীনের সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ।”

চুক্তি বাস্তবায়নের পথে চ্যালেঞ্জ

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, “এই সফরটি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের জন্য একটি ধারাবাহিক মাইলফলক। চুক্তিগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।” তিনি আরও জানান, “যদিও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে পানিপ্রবাহের বিষয়টি ভারতের সাথে সমন্বয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

এছাড়া, যৌথ ঘোষণায় মিয়ানমার সরকারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। চীনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ

বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা যেন একমাত্র কোন একটি দেশের প্রতি নির্ভরশীল না হয়, বরং সবার সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকার যেন এই সফরের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে চীনের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।

এছাড়া, চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানোও এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশকে নতুন কূটনৈতিক উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ