আমতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির ও শ্রমিক সর্দার মোঃ নিজাম উদ্দিন ধান-চাল গুদামজাতের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরীর ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদ্য গুদামের শ্রমিকরা এমন অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুর কবির গুদামজাতের শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার বলেন, টাকা আত্মসাৎ করেছি,পারলে কেউ কিছু করুক।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলা খাদ্য গুদামে গত পাঁচ বছরে অন্তত ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল গুদামজাত হয়েছে। ওই ধান-চাল গুদামজাত করতে সরকার টন প্রতি ১০০ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। কিন্তু ওই টাকা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হুমায়ুর কবির ও শ্রমিক সর্দার শ্রমিকদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাল মিলারদের কাছ থেকে মেট্রিকটন প্রতি ৩০০ টাকা আদায় করছেন। ওই টাকা থেকে শ্রমিকদের ১৫০ টাকা দিয়ে অবশিষ্ট ১৫০ টাকা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকতা ও শ্রমিক সর্দার মোঃ নিজাম উদ্দিন আত্মসাৎ করেছেন। এতে গত ৫ বছরে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন বলে আরো অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।
এ টাকা চাইতে গেলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শ্রমিকদের কাজে নিবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ১৪ জন শ্রমিক প্রতিবাদ করায় গত বছর ডিসেম্বর মাসে শ্রমিক ছাটাইয়ের নামে কলাপাড়া থেকে শ্রমিক এনে কাজ করিয়েছেন শ্রমিক সর্দার মোঃ নিজাম উদ্দিন। নিরুপায় হয়ে শ্রমিকরা গত বছর ১৯ ডিসেম্বর আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের কাছে অভিযোগ করেন।
মেয়র মতিয়ার রহমান ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হুমায়ুর কবির ও শ্রমিক সর্দার নিজাম উদ্দিনকে শ্রমিকদের সমুদয় টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ২১ দিন (মঙ্গলবার পর্যন্ত) পেরিয়ে গেলেও তারা শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করেনি বলে জানান শ্রমিকরা।
এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় শ্রমিক সর্দার মোঃ নিজাম উদ্দিন খাদ্য গুদামে সর্দার হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। কিন্ত ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা তাকে সর্দার হিসেবে গুদামে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার এহেক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা।
এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নষ্ট চাল ক্রয়, ওজনে কম দেয়া, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে কারসাজি এবং গোপনে চাল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিলার বলেন, ট্রাকে করে খাদ্য গুদামের সামনে ধান-চাল পৌছে দেয়ার দায়িত্ব মিলারদের। ঔখান থেকে গুদামজাত করার দায়িত্ব খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমাদের কাছ থেকে গুদামজাত করতে টন প্রতি শ্রমিক মজুরী বাবদ ৩০০ টাকা নিচ্ছে। এ টাকা নেয়ার কথা না। গুদামজাতের খরচ বাবদ সরকার টন প্রতি ১০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ধান-চাল গুদামজাতের খরচে আমাদের বেশ হয়রানীর শিকার হতে হয়।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত পাঁচ বছরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির ও সর্দার নিজাম উদ্দিন চাল গুদামজাতের সরকারী বরাদ্দ টন প্রতি ১০০ টাকাতো শ্রমিকদের দেয়নি আরো মিলারদের কাছ থেকে টন প্রতি ৩০০ টাকা এনে আত্মসাৎ করেছেন। গত ৫ বছরে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। এ বিষয়ে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলেই শ্রমিকদের ছাটাইয়ের নামে হয়রানী করছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারনের দাবী জানান তিনি।
শ্রমিক খোকন হাওলাদার বলেন, গুদামজাতের টন প্রতি সরকারী বরাদ্দের টাকাতো দেয়ই না। উল্টো চাল মিলারদের কাছ থেকে টন প্রতি নেয়া টাকারও অর্ধেক খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও শ্রমিক সর্দার আত্মসাৎ করেছেন।
আমতলী উপজেলা খাদ্য গুদাম শ্রমিক সর্দার নিজাম উদ্দিন টাকা আত্মসাতের কথা অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে কিছুটা সমাধান হয়েছে। সাক্ষাতে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।