নরসিংদীর রায়পুরায় ৩ ড্রেজার আটক, ১৯ লাখ টাকা জরিমানা অধরা আওয়ামী-বিএনপি বালুদস্যু চক্র

 

ফরিদ উদ্দিন রায়পুরা,(নরসিংদী) প্রতিনিধি:

নরসিংদীর রায়পুরায় চর মধুয়া ইউনিয়নের সীমানায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় মেঘনা নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩টি ড্রেজার জব্দসহ ৩জনকে আটক করে ১৯ লাখ টাকা জরিমানা ও প্রত্যেককে ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

গতকাল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইকবাল হাসান এর নির্দেশনায় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শফিকুল ইসলাম এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: সাজ্জাদ হোসেন সংগীয় ফোর্স নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত এ অভিযান পরিচালনা করেন।

এ সময় এশিয়া ড্রেজারে অবস্থানকারী আটকৃত রিয়াজুলকে ৫ লাখ টাকা জরিমানাসহ এক মাসের কারাদন্ড, প্লাবন ড্রেজারে অবস্থানরত সাইফুলকে ৭ লাখ টাকা জরিমানাসহ এক মাসের কারাদন্ড এবং রিয়া সুপার ড্রেজারে অবস্থানরত মেহেদীকে ৭ লাখ টাকা জরিমানাসহ এক মাসের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শফিকুল ইসলাম।

রায়পুরা উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সম্প্র্রতি রায়পুরা ইউনিয়নের সাহেরখোলা ও শ্রীণগর ইউনিয়নের আব্দুল্লাচর এলাকার প্রায় ৮শ মিটার বেড়ীবাধ ও ফসলী জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন গেছে। মেঘনা নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে তবে নদীর পানি কমলে ব্যপক ভাঙ্গনের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙ্গন শুরু হলে আবাদী জমি ও জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও তার ছেলে রাজিব আহমদ র্পাথ ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ সরকারী কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা দাপটে বিগত বছরগুলোতে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করেছেন। সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের একটি চক্র বিএনপিকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে বিএনপির নাম ভাংঙ্গিয়ে পুর্বের বালুদস্যু চক্র এখন সক্রিয় হয়ে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করছে। কিছুদিন পর পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ড্রেজার আটক করে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হলেও থামছেনা অবৈধ বালু উত্তোলণ। জরিমানা দিয়েই আবার নেমে পড়ছে বালু লুটের কাজে। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে আবাদি ফসলি জমি ও জনপদ বাড়ী ঘর,মসজিদ,মাদ্রাসা,স্কুল,কবরস্থান সহ নদীগর্ভে বিলীন যাচ্ছে।

বিএনপি’র একটি সূত্র জানায় সরকারী লীজ প্রাপ্ত কাতলার চর বালু মহালে আওয়া মীগ আমলে ১ শ জন পার্টনার নিয়ে লীজ গ্রহিতা বালু উত্তোলন শুরু করে। বর্তমানে ১শ জন আওয়ামী পার্টনার থেকে ৫০জন বাদ দিয়ে বিএনপি’র ৫০টি শেয়ার নেয়া হয়েছে। নতুন শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তা আওয়ামী শেয়ার হোল্ডারদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। শেয়ারের বিপরীতে প্রতিদিন লাভের অংশ ভাগ করা হয়। কাতলার চর বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করলে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হতোনা। নির্ধারিত স্থান ছাড়াও বালু তোলা হচ্ছে মহালের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। ফলে আবাদি ফসলি জমি ও জনপদ বাড়ী ঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ মহাল ও পাশ^র্বতীর্ এলাকা থেকে প্রতিদিন ২৫/৩০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।

গত মঙ্গলবার মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে সম্পূর্ন ভাঙ্গন অধ্যুষিত জনপদ চরমধুয়া ইউনিয়ন এলাকার মেঘনা নদী থেকে আটক করেন। এখানে বিএনপি’র নাম ভাংগিয়ে একটি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রাতুল হাসান জাকির এর অস্ত্রধারী ডাকাত বাহিনীর সাথে মিলে সম্পুর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে প্রায় ১মাস যাবত। প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫টি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু লুট করা হচ্ছে। কেউ বাধা দিতে এলে তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়া হয়। প্রতিরাতে ২/৩ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে তা নগদ টাকায় বিক্রি করা হয়। ডাকাতদের অস্ত্রের ভয়ে স্থানীয় লোকজন মুখ খুলতে পারছেনা।

 

মেঘনা নদী হইতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদী পাড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতি মুখে পড়ছে নদী পাড়ের মানুষ। ফসলি জমি বাড়ী-ঘর,স্কুল,মাদ্রাসা,মসজিদ,কবরস্থান,খেলার মাঠে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে জরিতরা নিয়মিত আগ্নেঅস্ত্রের মহরা দিচ্ছে। অবৈধ ড্রেজার বন্ধসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসী । অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরোদ্ধে র্দীঘদিন বালু উত্তোল নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মোবাইল কোর্টে ড্রেজার আটক করে জরিমানা করা হলে তা এ বালুদস্যূ চক্র সাথে সাথে মিটিয়ে দেয়।

কিন্ত প্রকৃত বালুদস্যু চক্র থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। প্রকৃত বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বালু উত্তোল বন্ধ হচ্ছেনা। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এ ব্যপারে বালু দস্যু চক্রের গড ফাদারদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার মানুষ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ