রাজউকের প্লট দুর্নীতি মামলা: হাসিনা-রেহানা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

রাজউকের প্লট দুর্নীতি মামলায়

একাধিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে ঝড় তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাম্প্রতিক পদক্ষেপ। দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইনের কাঠামোয় এক বড় বার্তা দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার কন্যা ও সাবেক ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং কন্যা আজমিনা সিদ্দিকসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত।

এই পরোয়ানা শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বলয়ের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি একাধিক মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। বিষয়টি এতদিন চাপা থাকলেও, এপ্রিলের শুরু থেকেই এটি প্রশাসন ও আদালতের পরিসরে গতি পেতে থাকে।

দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ৬০ কাঠা জমির ৬টি প্লট, যেগুলোর বরাদ্দের ক্ষেত্রে একাধিক বিধিবহির্ভূত কাজ হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় পদে থাকার সময় নিজের এবং আত্মীয়দের নামে প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটান। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে একত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই বরাদ্দ বাস্তবায়ন করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। কেননা, এত উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক পরিবার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের একসঙ্গে একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত করে আদালতের সামনে দাঁড় করানোর দৃষ্টান্ত অতীতে খুব কমই দেখা গেছে।

এছাড়া, মামলার অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক সদস্য মো. খুরশীদ আলম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মো. সালাহ উদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৪ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

আইনজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও দুদকের সক্রিয় ভূমিকার দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে, এটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক নতুন মোড়ও নির্দেশ করে। এই মামলার প্রভাব আগামী নির্বাচনি রাজনীতি, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ