বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে এমন একটি প্রকল্প হলো মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। এই প্রকল্পকে ঘিরে আর্থিক, কারিগরি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে। আগামী ২২ এপ্রিল জাপানি দুই প্রতিষ্ঠান—পেন্টা ওশান ও থোয়া করপোরেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই চুক্তির মাধ্যমে শুরু হবে প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ, যার মধ্যে রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেটি—একটি কনটেইনার এবং অন্যটি মাল্টিপারপাস।
এই নির্মাণকাজের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৯৭ কোটি টাকা, যা জাইকার সম্পূর্ণ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে উন্নতমানের জাপানি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে নির্মাণ হবে অত্যাধুনিক টার্মিনাল অবকাঠামো। চুক্তির মেয়াদ থাকবে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণকাজের গতি বাড়াতে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি জাপানেই তৈরি করে বাংলাদেশে আনা হবে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি প্রথম গ্রহণ করা হয় ২০২০ সালের মার্চে। এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালে, কিন্তু পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৯ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপের কাজ এরই মধ্যে কিছুটা এগিয়েছে, যেমন ব্রেকওয়াটার ও কৃত্রিম চ্যানেল তৈরি। বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বড় জাহাজগুলো এই বন্দরে আসছে, তবে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন আধুনিক টার্মিনাল সুবিধা।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এক পরিদর্শনে বলেন, বন্দর চালু হলে ২০৩০ সাল থেকে মাদার ভেসেলগুলো সরাসরি নোঙর করতে পারবে, যা দেশের জন্য বিশাল মাইলফলক হবে। বন্দরটিতে বছরে ১১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে, যা ২০৪১ সালে দাঁড়াবে ২৬ লাখে। বন্দরের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাবে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমবে, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হবে সহজতর, এবং দেশের অর্থনীতিতে আসবে গতি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।