পারমাণবিক চুক্তিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

পারমাণবিক চুক্তিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত সংলাপ অবশেষে ওমানের ছায়ায় অনুষ্ঠিত হলো। যদিও মুখোমুখি বৈঠক হয়নি, তবে এই পরোক্ষ আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার সম্ভাব্য মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশ্লেষকরা।

ওমান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে আসছে। এবারও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ‘ইতিবাচক ও গভীর’ আলোচনা নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফ এবং ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে পরোক্ষভাবে হলেও এই আলোচনাকে ওয়াশিংটন “উৎপাদনশীল ও গঠনমূলক” বলে আখ্যায়িত করেছে।

আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল—তেহরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনা, কিছু রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি এবং নির্দিষ্ট কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। এই প্রক্রিয়া সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের পথে ইরানের অগ্রগতি থামানোর পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরাকচি বলেন, “আমরা কথার কথা বলার জন্য আলোচনা করছি না। যদি এই ভিত্তিমূলক আলোচনায় প্রাথমিক সমঝোতা হয়, তাহলে আমরা শান্তিপূর্ণ পথে বাস্তব অগ্রগতির দিকে এগোতে পারব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদ থেকেই এটাই দুই দেশের প্রথম প্রকৃত সংলাপ।

মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি সম্ভাব্য স্বল্পমেয়াদী সমঝোতার ভিত্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে একটি পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল বা বিকল্প চুক্তির পথ উন্মুক্ত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে তা ২০১৫ সালের জেসিপিওএ (Joint Comprehensive Plan of Action) চুক্তির পুনর্জীবনের দিকেও ইঙ্গিত দিতে পারে, যদিও ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। বর্তমান আলোচনার পেছনে রয়েছে ভিন্ন এক বাস্তবতা—যেখানে গাজা যুদ্ধ, ইসরায়েল-ইরান বিরোধ এবং চীন-রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ সবই একত্রে প্রভাব ফেলছে।

এই জটিল পটভূমিতে সংলাপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরবর্তী শনিবার আবারও উভয় পক্ষ ওমানে বসবে বলে জানানো হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন—কূটনৈতিক অগ্রগতি যতটা সম্ভব, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কাও ততটাই বাস্তব।

সুতরাং, এই সংলাপ কেবল দুটি দেশের ভবিষ্যৎ নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের পরিণতির নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ