রাষ্ট্র সংস্কারে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিযুক্ত ফোরামের ২১ দফা দাবী ও প্রস্তাবনা

রাষ্ট্র সংস্কারে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি যুক্ত ফোরামের ২১ দফা দাবী  প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ২১ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা নিয়ে যুক্ত ফোরামের সাংবাদিক মোলাকাত। ১২ আগস্ট সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে মেট্রো লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্ত ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক গণসংগঠক ও রাষ্ট্র চিন্তক চাষী মামুন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ জাকির হোসেন, ড. শরীফ সাকি, মোতাহার হোসেন মানিক, পারভেজ চৌধুরী, এস এম তাজুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মঞ্জুর হোসেন ঈসা, আসাদুজ্জামান খান, সুমন হাওলাদার, হারুন-অর-রশিদ, সিয়াম সামি প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিসমূহ নিম্নরূপ-

১। বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করে জনগণের সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্তৃক প্রণীত এক তরফা যত কালা কানুন আছে সেগুলো অনতি বিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে।

২। যে প্রয়োজন এবং লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বাংলাদেশ- সে প্রয়োজন বাস্তবায়ন তথা টেকসই সংস্কারের জন্য নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন    সরকারের যতদিন যৌক্তিক সময় বা মেয়াদ প্রয়োজন ততদিন আপোষহীনভাবে কন্টিন্যু করতে হবে। তবে এই মেয়াদ ৪-৬ বছর যৌক্তিক বলে মনে করে যুক্তফোরাম।

৩। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের গঠন, প্রকৃতি, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস ইত্যাদি বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে বেশি-বিদেশি গবেষক ও  বিশেষজ্ঞদের প্যানেল তৈরি করে আন্তর্জাতিক গবেষণা দলিল তৈরি এবং প্রকাশ করতে হবে। দেশজুড়ে বিভিন্ন কারাগারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৮ বছরে যত নিরীহ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী, প্রতিবাদকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের কালো আইনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলায় আটক রয়েছেন, অনতিবলম্বে তাদের মুক্ত করতে হবে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৪। বিডিআার হত্যাকান্ড, হেফাজত হত্যাকাণ্ড এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং অতি দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক দৃষ্টান্তমূলক করতে হবে। সাংবাদিক পেশাজীবী হত্যা এবং সাগরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং অতি দ্রুত সময়ে সকল হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ থেকে পূর্ব নাম  বিডিআর বা বাংলাদেশ রাইফেলসে ফেরত যেতে হবে। পুলিশের পোশাক ও লোগো পরিবর্তনে সরকারের সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী মনে করছি। পুলিশ আনসার র্যাব সহ সকল বাহিনীর সময় উপযোগী সংস্থার, উন্নয়ন ও তাদের আত্মিক-মানবিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাউন্সিলিং এবং মেডিটেশন এর ব্যবস্থা করতে হবে। গত ১৮ বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যার দায়ে পতিত ফাটিস্ট সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৫। রাজনৈতিক দল পরিচালনা এবং নতুন দল প্রতিষ্ঠায়    বিদ্যমান আইন সংস্কার করে গণতান্ত্রিক, রাজনীতি ও জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে। রাজনৈতিক দল সমূহে এক নায়ক তন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে। একই ব্যক্তি কোন দলের দুই মেয়াদের বেশি সভা প্রধান/ সভাপতি অথবা চেয়ারম্যান থাকতে পারবেন না। দলীয় প্রধান সরকার প্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।

৬। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে জনগণ কর্তৃক (জনপ্রতিনিধি কর্তৃক নয়) সরাসরি নির্বাচিত হতে হবে। আর তো সামাজিক রাজনৈতিক শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ সকল খাতের অবস্থা এবং সকল প্রকার দুর্নীতির শেকরকে উপড়ে ফেলে নতুন নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে হবে  করতে হবে । ব্যক্তির নয় সিস্টেমের পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে এবং  বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক টেকসই অগ্রযাত্রা এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এই সিস্টেমকে  মানতে সকলকে বাধ্য করতে হবে।

৭। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে এবং ‘পুতুল’ রাষ্ট্রপতি প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে। রাষ্ট্র পূণর্গঠন,  সংস্কার ও উন্নয়ন আমাদের তরুণ প্রজন্ম, ছাত্র সমাজ সহ মেধাবী সকল নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সংসদে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ এবং রাষ্ট্রপতির সাথে উপরাষ্ট্রপতি পদ সৃষ্টি করতে হবে।

৮।কোন ব্যক্তি দুই বারের বেশি সংসদ সদস্য/ প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালু করতে হবে। দেশে অন্তত দশটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করতে হবে এবং পরিষদে একজন গভর্নর নিয়োগ দিতে হবে।

৯। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কে ডিসেন্ট্রালাইজ করতে হবে; যেমন- ডিভিশনাল হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিম্ন আদালত গুলোকে দলীয় প্রভাব মুক্ত করতে হবে। পুলিশ সহ সকল বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করতে হবে। সারাদেশে লক্ষ লক্ষ প্রতিহিংসামূলক শত্রুতামূলক, হয়রানী মূলক মামলার জট রয়েছে, এগুলোকে দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনে সামাজি সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

১০। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন ৯০/বি ধারা (কালা কানুন) বাতিল করতে হবে।  স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ১%  অগ্রিম ভোটার প্রদানের যে বিষয়টি (৯২/১ গ ধারা) বাতিল করতে হবে।

১১। সর্বক্ষেত্রে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে; এজন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, গবেষণা ও জবাব দিহিতার লক্ষ্যে দেশের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সহ সংশ্লিষ্ট খাত সমূহের স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে পৃথক জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে। যেকোনো সরকার যাতে অগণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিস্ট না হতে পারে সেজন্য একটি ছায়া সরকার বা ন্যাশনাল পিপলস কাউন্সিল গঠন করতে হবে।

১২। পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থকেই সর্বাগ্রে এবং সর্ব প্রধান হিসেবে রেখে এই নীতি ঢেলে সাজাতে হবে।  কোন দেশের সাথে বন্ধুত্বের নামে দাসত্বের সম্পর্ক কিংবা দেশ বিক্রির সম্পর্ক রাখা যাবে না, করা যাবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কার স্বার্থে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্লেয়ার বাহিনীর পাশাপাশি একটি পিপল স্টুডেন্ট ফোর্স গঠন করতে হবে। সকল শহীদদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রকাশ করতে হবে। আহত নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সকলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে, জুলাইকে শোকের মাস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ৫ আগস্ট কে গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবল  একটি “গণঅভ্যুত্থান জাদুঘর” প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১৩। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সময়োপযোগী বহুমাত্রিক কার্যকরী এবং টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে সকল সরকারি জুটমিল সমূহ দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রোডাকশন উপযোগী করে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। পাটকল শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা খাতের জন্য টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনতিবিলম্বে হাতের শ্রমিকদের জন্য ক্রমিক পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারি গবেষণায় বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। প্রতিটি জেলায় আলাদা গবেষণা  কেন্দ্র এবং গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

১৪। “একটি বাড়ি একটি শিল্প” স্লোগান এবং টার্গেট নিয়ে গ্রামীণ শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হবে। প্রতিটি পরিবার হবে শিল্প পরিবার। প্রতিটি উঠান হবে প্রডাকশন ফিল্ড। প্রত্যেক পরিবারের নবীন ও তরুণদের বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিধান করতে হবে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক উৎপাদনশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

১৫। SME BANK প্রতিষ্ঠা করতে হবে। SME DEVELOPMENT & TRADE PROMOTION COUNCIL গঠন করতে হবে। রুরাল কালচার এবং হেরিটেজকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের উপযোগী করে প্রচার ও প্রমোশন করতে হবে। ট্র্যাডিশনাল ট্যুরিজম সেক্টর এর পাশাপাশি বিজনেস  ট্যুরিজম, এসএমই ট্যুরিজম এবং রুরাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরিজম কে বাস্তবায়ন ও প্রমোশন করতে হবে। ব্লু ইকোনমি ও গ্রীণ  ইকোনোমিকে সংরক্ষণ, ডাইভারসিফিকেশন ও আর এন্ডি ডি করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে মেয়ে তথা নারীদের অংশগ্রহণ, শ্রম-কর্মের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উপযুক্ত মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রদান করে

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ