নবীর জন্মদিনে চট্টগ্রামে বর্ণিল আলোকসজ্জা

সড়কজুড়ে আলোকসজ্জা। একটু পর পর ছোট-বড় তোরণ। একইসঙ্গে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। এছাড়াও সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও পুঁতে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর মোড় এলাকার দৃশ্য এমনই। এই মোড় থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসাসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে লাগানো হয়েছে রঙবেরঙের বাতি। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

শুধু মুরাদপুর নয়, পুরো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে একইভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নবীর জন্মদিন অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আয়োজনের যেন কোনো কমতি নেই। ইতোমধ্যে নবীপ্রেমীদের ঢল নেমেছে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার দিকে। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতেও মাদ্রাসার আশপাশের এলাকায় লোকজনের ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন খাবারের দোকানে ভিড় লেগে আছে। কোথাও কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে সকাল ৮টায় শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী জুলুস। প্রতিবছর এই জুলুসে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় এই জুলুসে।

রাঙ্গামাটি থেকে জুলুসে আসা ইফতেখার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। জুলুসে অংশ নিতে আগেভাগে চট্টগ্রাম পৌঁছেছি। নতুন পাঞ্জাবি পরে বৃহস্পতিবার জুলুসে যাব। আমাদের ঈদ তিনটি। ঈদুল ফিতর, আজহা ও মিলাদুন্নবী। নবীর জন্মদিনে এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে গর্বিত আমরা।

জানা গেছে, ৫১তম জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দিতে ইতোমধ্যে পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তিনি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান। এরপর বিমানবন্দর থেকে তাকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে আলমগীর খানকাহে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ ও আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ। তারাও অতিথি হিসেবে জুলুসে যোগ দেবেন।

আয়োজকরা জানান, এবার জুলুস জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে সকাল ৮টায় শুরু হবে। এরপর বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, গণিবেকারি, খাস্তগীর স্কুল, আসকার দীঘি, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, দুই নম্বর গেট হয়ে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে শেষ হবে। জুলুস শেষে মাহফিল ও জোহর নামাজের পর দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, বিপুল পরিমাণ নবীপ্রেমী লোকজন জুলুসে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ১০ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক থাকবে।

নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা

জশনে জুলুস উপলক্ষ্যে সড়কে যান চলাচলের বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, মেডিকেল হতে অলিখাঁ মসজিদের মুখ, তেলিপট্টি মোড়, চকবাজার থানা রোডের মুখ, সিজিএস স্কুল মোড়, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারী মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগী পাহাড় মোড়, সার্সন রোডের মুখ, নেভাল অ্যাভিনিউ, স্টেডিয়াম গোল চত্বর, আলমাস সিনেমা মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, এসএইচ খান ফিলিং স্টেশন (ওয়াসা), জিইসি মোড়, ষোলশহর ২নং গেট, মুরাদপুর রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হবে।

পার্কিং ব্যবস্থাপনা

জুলুসে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহনগুলো মুসল্লিদের নামিয়ে দিয়ে সুবিধাজনক স্থানে পার্কিং করবে। নগরের ফিরিঙ্গীবাজার বালুর মাঠ, সিআরবি সাত রাস্তার মাথা, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, কদমতলী-শুভপুর বাস টার্মিনাল, অক্সিজেন মোড়, বায়েজিদ লিংক রোড, আমবাগান শহীদ শাহজাহান মাঠ, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এবং অলংকার মোড় পার্কিং স্থান হিসেবে ব্যবহার করবে। পার্কিংয়ের বিষয়ে পবিত্র জুলুস উদযাপন কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুমোদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। র‌্যালি চলাচলের রুটে কোনো প্রকার যানবাহন পার্কিং করে র‌্যালি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না বলে পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ