সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নরসিংদীতে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন

বশির আহমদ মোল্লা, নরসিংদী প্রতিনিধি:

দেশের কাঁচাবাজারসহ খোলাবাজারে ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে তিন দিন গত হলে নরসিংদী জেলার কোথাও তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। প্রায় দেড় মাস আগে এই পলিথিন নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েও বাজারে থেকে উঠেনি ক্ষতিকর এই পণ্য।

সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। এমনকি অনেক দোকানে বিকল্প ব্যাগ রাখতেও দেখা যায়নি। ফলে ক্রেতাদের পলিথিনে করেই কাঁচাবাজার নিয়ে যেতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিনের এ অভ্যাস পরিবর্তনে সময় প্রয়োজন, বলছেন ক্রেতারা। উৎপাদন বন্ধ করে সরবরাহ কমানোর পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে বিকল্প ব্যাগ বাজারে রাখার তাগিদ তাদের।

শনিবার (৩ নভেম্বর) সরেজমিন নরসিংদী জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে পলিথিন ব্যবহারের চিত্র। বাজারের কোথাও ক্রেতা-বিক্রেতার হাতে দেখা যায়নি পাটের ব্যাগ কিংবা পরিবেশবান্ধব অন্যকোন ব্যাগ। ক্রেতাদের হাতে হাতে দেখা গেছে ৩ থেকে ৪টি মালামাল নেওয়া পলিথিনের ব্যাগ।

বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জানান, পলিথিন বন্ধ হওয়া উচিত, সেটা সবাই জানেন। কিন্তু মানেন না, আগে সবাই কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতেন। যখন পলিথিন বের হলো তখন কাপড়ের ব্যাগ চলে গেল। তখন মালামাল নিতে ব্যাগ নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হতো না। ক্রেতারাই ব্যাগ নিয়ে আসতেন। এখন যদি বলি ব্যাগ নেই। তাহলে ক্রেতা চলে যায়। তাই বাধ্য হয়েই পলিথিন রাখতে হয়। আর দীর্ঘ দিনের অভ্যাস তো আর দুই-চার দিনে চলে যাবে না।

বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানান, ‘পলিথিনের বিকল্প অন্য কোনো ব্যাগ আমরা পাচ্ছি না, তাছাড়া অধিকাংশ ক্রেতাই কোন ব্যাগ নিয়ে আসেনা তাহলে আমরা কীভাবে দেব। যার ফলে নিরুপায় হয়ে পলিথিনেই করেই মাল দিচ্ছি। কাস্টমাররা যদি ব্যাগ নিয়ে আসতো সেক্ষেত্রে আমরা ব্যাগেই দিতাম। কিন্ত কোনো কাস্টমারকে পাটের ব্যাগ আনতে দেখিনি।”

নরসিংদী বড় বাজারের মাছ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকার পলিথিন বন্ধের ঘোষণা দিছে ঠিক আছে কিন্তু তার আগে উৎপাদন পর্যায়ে বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া পলিথিনের বিকল্প অন্য কোনো ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না, আমরা কাস্টমারদের কীভাবে দেব। ফলে নিরুপায় হয়ে পলিথিনে করেই মালামাল দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা যদি ব্যাগ নিয়ে আসেন, বিক্রেতারা তো সেই ব্যাগেই জিনিসপত্র দেবেন। কিন্তু কোনো ক্রেতাকে তো পাটের ব্যাগ আনতে দেখা যাচ্ছে না।

সবজি বিক্রেতা হাসান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে শুনেছি। কী করব ক্রেতারা তো ব্যাগ নিয়ে আসেন না। পলিথিন ছাড়া অন্য কোনো ব্যাগ যে দেব, তার দাম অনেক। একজন ক্রেতা যদি ১০০ টাকার জিনিসপত্র নেন, তাকে যদি আমি ১০ টাকার ব্যাগ দিই, তাহলে আমি লাভ করব কী? হ্যাঁ, ক্রেতারা যদি ব্যাগের টাকা দেন, তাহলে আমাদের পোষাবে। আমাদের প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার পলিথিন লাগে। এর বিপরীত কোথাও থেকে যে পাটের ব্যাগ কিনব সেই ব্যবস্থাতো নেই। ব্যাগ পেলে দোকানে ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখতাম।

সুবির সাহা নামে এক মুদি দোকানী বলেন, এত এত পলিথিনের বিপরীতে ব্যাগ কীভাবে পাবো। বাজারে খুব কম মানুষ ব্যাগ নিয়ে আসে। যারা ব্যাগ আনে সেটাও পলিথিনের মতো। সরকার যদি সূলভ মূল্যে ছোট বড় ব্যাগ দেয়, তাহলে মানুষ কিনবে।

শফিকুল ইসলাম নামে পলিথিন বিক্রেতা বলেন, এখন আমারা কোন মাল পাচ্ছি না। আমাদের স্টকে যেগুলো ছিল, সেগুলোই বিক্রি করছি। দুই এক দিন পর আর বিক্রি করতে পারব না। আমরা যদি পাইকারি বাজারে পলিথিন না পাই, তাহলে বিক্রি করব কোথা থেকে। পলিথিন বন্ধ করতে হলে আগে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
হারণ অর রশিদ নামে বাজার করতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, এক ঢুলা কিংবা পাটের ব্যাগ নিয়েই বাজার করতে এসেছি। আমাদের বাপ-চাচাদের গামছায় বেঁধেও মালামাল কিনে নিতে দেখেছি।কিন্ত যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের এখন আর ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসা হয়না। এখন সর্বত্রই পলিথিনের ব্যবহার।

তাছাড়া এখন আর খোলাবাজারে ব্যাগ খুজে পাওয়া যায় না। তাই নিরুপায় হয়ে আমরাও পলিথিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা জানেন কিনা মাছ কিনতে আসা কবির হোসেন নামে এক ক্রেতা জিজ্ঞেস করা হয়ে বিষয়টি তিনি জানেন বলে জানান। মাছ বিক্রিতে পলিথিনে যখন মাছগুলো ভরে দিচ্ছে তখন তিনি বাধা দিলেন না কেন এমন প্রশ্নে তিনি অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় আসলে বাজারে কোন ব্যাগ নিয়ে আসিনি। তাছাড়া ছটের অথবা অন্যকোন ব্যাগ বাজারে দেখতে পাইনি। অজ্ঞতায় মাছ বিক্রেতা আমাকে যা দিচ্ছে তাতে নিতে হচ্ছে।

নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার পলিথিন ব্যাগ বিক্রয় ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আমাদেরকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাছাড়া পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে প্ররোচারণমূলক মাইকিং অন্য কোন কিছুই আমাদের চোখে পড়েনি। এ ব্যাপারে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, পলিথিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে আমাদের বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এর মধ্যে গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় ইমামরা তাদের বয়ানের মাধ্যমে মুসুল্লিদের সামনে পলিথিনের ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরাসহ তাদের মাঝে লিপলেট বিতরণ করা। শনিবার পুটিয়া হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে লিপলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বাজারগুলোতে লিপলেট বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ (রবিবার) পলিথিন ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ