কাবা শরিফ যেভাবে পরিষ্কার, সুগন্ধিযুক্ত করা হলো

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়ার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মক্কার ডেপুটি প্রাদেশিক শাসনকর্তা শাহজাদা বদর বিন সুলতান বিন আব্দুল আজিজ, দুই পবিত্র মসজিদের ভৃত্য বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পক্ষ থেকে কাবার ধোয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

জমজমের পানি, ইরাকের অকৃত্রিম গোলাপ দিয়ে কাবা শরিফ ধোয়ার পর উদ ও আদার্স সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় হারামাইন শরিফাইনের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, ইমাম ও বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ অংশগ্রহণ করেন।

পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কাজে নানারকম দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আছে গোলাপজল, উদ, ইতার (পারফিউম) মিশ্রিত বিশেষ (লিকুইড) পদার্থ। উন্নত মানসম্পন্ন এ উপাদানগুলোর দামও অনেক চড়া। ধোয়ার আনুষ্ঠানিকতার পূর্বেই এসব সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।

মূলত মহানবী হজরত ‍মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার পরম্পরায় চলে এসেছে চলে আসছে। অষ্টম হিজরিতে রাসুল (সা.) মক্কা জয়ের পর পবিত্র কাবাঘর ধৌত করেন। ইসলামের সম্মানিত খলিফারাও অতিমাত্রা গুরুত্বের সাথে এ কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। তাদের পর থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রথা চালু রয়েছে।

বছরে একবার কাবা শরিফ ধোয়া হবে

প্রতি আরবি বছরের মহররম ও শাবান মাসের প্রথম দিন নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ ধৌত করা হলেও এবার তা হচ্ছে না। এক টুইটার বার্তায় পবিত্র মক্কা-মদিনার মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী আরবি নতুন বছরের (মহররম মাস) শুরুতে পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার কাজ সম্পন্ন হবে এবং এবার থেকে বছরে একবার পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর শাবান মাসের প্রথম দিন পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার কর্মসূচী পালন করা হয়। সৌদিআরবের বাদশাহ এবং মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নেন।

কাবা ঘর পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয় জমজম পানি, খাঁটি গোলাপজল এবং উন্নতজাতের সুগন্ধী উদ ও কস্তুরি। কাবা ঘর ধোয়ার জন্য ভেতরে প্রবেশের আগে তাওয়াফ ও দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করা হয়। কাবা শরিফ পরিষ্কার করতে গোলাপের সুগন্ধিযুক্ত জমজমের পানি মেঝেতে ঢালা হয়, তারপর খালি হাতে খেজুর পাতা দ্বারা পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার করার পর ফ্লোর এবং দেয়াল সাদা কাপড় এবং উন্নতমানের টিস্যু দ্বারা শুকানো হয়। কাবা শরিফ ধোয়ার সময় দুই ঘণ্টা দরজা খোলা থাকে।

মুসলমানরা প্রতিদিন কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। প্রতি বছর লাখ লাখ লোক হজ ও ওমরা পালনে কাবায় আসেন। হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য কাবাঘর প্রদক্ষিণ করা অন্যতম প্রধান একটি কাজ। হজ ও ওমরা পালনকারীরা কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে তাওয়াফ করেন। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) কাবাঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) আজ থেকে ৪০০০ বছর পূর্বে আল্লাহর নির্দেশে কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ করেন।

পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়ার এ কাজটি একটি বড় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। যা আসলে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণে করা হয়। ৬৩০ সালে যখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করেছিল তখন তিনি মহান আল্লাহর এ পবিত্র ঘরকে ধৌত করেছিলেন।

তবে শাবান মাসে কাবা শরিফ ধোয়া হলেও কাবার গায়ে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে নতুন গিলাফ পড়ানো হয়।

মক্কা নগরীর গভর্নর ও প্রধান খতিবের নেতৃত্বে জমজমের পানি দিয়ে ধোয়ার কাজ শেষ হল পবিত্র কাবা

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে এগারোটা) কাবা ধোয়া কাজ শুরু করা হয়।

সৌদি বাদশাহ সালমানের পক্ষে মক্কা নগরীর গভর্নর প্রিন্স খালিদ আল ফয়সাল কাবা শরিফ ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতার কাজে নেতৃত্ব দেন। এ খবর জানিয়েছে সৌদি গেজেট।

পূর্ব ঘোষণা ও রীতি অনুযায়ী সকালে কাবা ধোয়ার কথা থাকলেও এবার রীতি ভেঙে এশার নামাজের পর পবিত্র কাবা ধোয়ার কাজ সম্পন্ন হল।

কাবা ধোয়ার কাজে হারামাইন প্রেসিডেন্সির চেয়ারম্যান ও কাবা শরিফের প্রধান খতিব শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস, স্পেশাল ইমারর্জেন্সি ফোর্সের কমান্ডার ও হজ সিকিউরিটি ফোর্সের কমান্ডার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও অংশ নেন। অন্য সময় বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নিলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের কাবা ধোয়ার কাজে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

কাবা ধোয়া উপলক্ষে সন্ধ্যার পর পর কাবা শরিফের দরজা খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর মক্কায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় কাবা ধোয়ার কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়। বৃষ্টি থামলে সবাই কাবা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা পবিত্র জমজমের পানির সঙ্গে গোলাপ, উন্নতমানের সুগন্ধি উদ ও কস্তুরি মিশ্রিত পানি দিয়ে পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে ধোয়ামোছার কাজ করেন। পবিত্র কাবা ধোয়ার পর বের হয়ে হাজরে আসওয়াদে (কালো পাথর) চুম্বন করেন। অতঃপর কাবা তাওয়াফ করেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করেন।

 

আরও পড়ুন: নতুন গিলাফে মোড়ানো হলো কাবা শরিফ

 

কাবা শরিফ ধোয়ার সময় দুই ঘণ্টা দরজা খোলা থাকে। এ সময় কাবা শরিফের চারদিকে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখেন।

রীতি অনুযায়ী প্রত্যেক মহররম মাসে পবিত্র কাবা ধোয়া হলেও আরাফার দিন (৯ জিলহজ) কাবার গিলাফ বদলানো হয়। কাবা ধোয়াকে সৌদি সরকার সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটা একটা উৎসবও বটে।

রীতি অনুযায়ী, প্রত্যেক মহররম মাসে পবিত্র কাবা ধোয়া হলেও আরাফার দিন (৯ জিলহজ) কাবার গিলাফ বদলানো হয়। কাবা ধোয়াকে সৌদি সরকার সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটা একটা উৎসবও বটে। কারণ কোরআন ও হাদিসে বায়তুল্লাহর মর্যাদা দান, একে পবিত্র রাখা ও পরিশুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

কাবা ঘর পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নবীর একটি আদর্শ। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি সাহাবায়ে কেরামদের সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘরে প্রবেশ করে বাহ্যিক ও মৌলিকভাবে কাবা ঘরের পরিশুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেন। কাবায় থাকা মূর্তিগুলোকে অপসারণ করেন। পরে খোলাফায়ে রাশেদীনও এই ধারা অব্যাহত রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্নতের অনুসরণে বর্তমান শাসকরাও কাবাঘর ধোয়া অব্যাহত রেখেছেন।

//এমটিকে

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ