রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মোদির চীন সফর: সাংহাই সম্মেলনে নজর দক্ষিণ এশিয়ায়

মোদির চীন সফর: সাংহাই সম্মেলনে নজর দক্ষিণ এশিয়ায়

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন ২৯ আগস্ট সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সফরকে ঘিরে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়ার নেতাদের একসঙ্গে বসা দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা এশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানাবেন। কূটনৈতিক প্রোটোকলে এমন পদক্ষেপকে অনেকেই “অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ” হিসেবে দেখছেন। সাধারণত বহুপাক্ষিক সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতাদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হয় নির্দিষ্ট প্রোটোকল অনুযায়ী। কিন্তু শি জিনপিংয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগ কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মোদির সফরের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। ফলে এ সফরকে ঘিরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নতুন অগ্রগতি হতে পারে কি না—সেদিকে কূটনৈতিক মহলের দৃষ্টি নিবদ্ধ।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের বন্ধুত্ব বরাবরই দৃঢ়। ফলে পুতিনের সঙ্গে মোদির বৈঠকেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমস–এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নীতির চাপে ভারত এখন এশিয়ার ভূরাজনীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যে আরও বড় ভূমিকা নিতে চাইছে। এসসিওর মতো আঞ্চলিক ফোরামে সক্রিয় হয়ে ভারত শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় না, বরং বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে নিজের কূটনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী করতে চায়।

সরকারি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সফরে সন্ত্রাস দমন, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করবেন। দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসব ইস্যু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনের আগে এক বক্তব্যে মোদি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের উন্নতি তখনই সম্ভব যখন প্রতিবেশী দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করবে। সহযোগিতার মাধ্যমে কেবল উন্নয়ন নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করা সম্ভব।” তাঁর এই মন্তব্য কেবল কূটনৈতিক ইঙ্গিত নয়, বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর একটি দৃঢ় বার্তাও বহন করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদির এই সফরের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া নতুন কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ পেতে পারে। বিশেষ করে এসসিওর মঞ্চ ব্যবহার করে ভারত যদি আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা নেয়, তাহলে তা শুধু ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকেই শক্তিশালী করবে না, বরং সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্যও সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিন–জিনপিং–মোদির একসঙ্গে বৈঠক কেবল কৌশলগত নয়, প্রতীকী অর্থও বহন করছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ভিন্নমত পোষণ করছে, তখন এশিয়ার তিন শক্তিধর দেশের একসঙ্গে বসা একটি নতুন ভূরাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে। এটি কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, নরেন্দ্র মোদির চীন সফরকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই সফর ভারতের জন্য যেমন কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃসংজ্ঞায়নের সুযোগও এনে দিতে পারে। বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন