রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ৭ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত, দাবি ট্রাম্পের

গাজার যুদ্ধ তিন সপ্তাহে শেষ হতে পারে: ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত স্বল্পস্থায়ী কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অন্তত সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ওই সময়ে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছিলেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এসব মন্তব্য করেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস একইদিন বিষয়টি প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “সেই সময় দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত উত্তাল। ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল। এমনকি সংঘাত দ্রুতই পারমাণবিক রূপ নিতে পারত।”

তিনি আরও জানান, যুদ্ধ চলাকালে উভয় পক্ষের বিমান বাহিনী থেকে সাতটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়। তবে কোন দেশের কতগুলো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি তিনি।

ট্রাম্প বলেন, “আমি তখন দুই দেশকে সরাসরি বলেছিলাম—তোমরা যুদ্ধ করতে চাও, নাকি বাণিজ্য করতে চাও? যদি যুদ্ধ চালাও, তাহলে কোনো বাণিজ্য হবে না। আমি মাত্র ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলাম মীমাংসার জন্য।”

তার দাবি অনুযায়ী, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই কঠোরভাবে সতর্ক করেছিলেন। এমনকি তিনি দুই দেশের উপর শতভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তার ভাষায়, “আমার হাতে ছিল শুল্ক ও বাণিজ্যের শক্তিশালী হাতিয়ার। আমি স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, যদি যুদ্ধ থামানো না হয়, তাহলে বাণিজ্যের সব দরজা আমি বন্ধ করে দেব।”

ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ওই সতর্কবার্তা ও চাপ প্রয়োগের পরই দ্রুত যুদ্ধ থেমে যায় এবং দুই দেশ সংঘাতবিরতির ঘোষণা দেয়।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতা এবং কূটনৈতিক চাপের কারণেই ১০ মে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তাদের দাবি, ওই রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় এবং দুই পক্ষ তা মেনে নেয়। এর পর থেকে ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় “উত্তেজনা প্রশমনে ঐতিহাসিক ভূমিকা” পালন করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনেও কিছুটা হলেও ট্রাম্পের দাবির পক্ষে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গত জুনে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত এক সেমিনারে ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিব কুমার প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে, ৭ মে রাতে পাকিস্তানের ভেতরে একটি বেসামরিক স্থাপনায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার পর কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান হারিয়ে যায়। যদিও তিনি সঠিক সংখ্যা উল্লেখ করেননি, তবে তাঁর ওই বক্তব্য পরবর্তীতে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তাদের পক্ষ থেকেও সংঘাত চলাকালে কিছু ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছিল। তবে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সবসময়ই সংবেদনশীল। উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ায় সামান্য সংঘাতও দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যদি আমি হস্তক্ষেপ না করতাম, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধটা পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নিতে পারত। সেই ঝুঁকি ছিল খুবই বাস্তব।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি জানতাম, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্ব ভয়াবহ সংকটে পড়বে।”

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্যে কিছুটা সত্যতা থাকলেও তিনি নিজের ভূমিকা অনেকটা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ভূমিকা থাকলেও ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাপ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এই বক্তব্য শুধু ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়েই নয়, বরং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকাকেও নতুন করে আলোচনায় এনেছে। যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি যেমন এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে, তেমনি পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা কতটা বাস্তব ছিল—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে, মে মাসের সেই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়াকে এক বিপজ্জনক প্রান্তসীমায় নিয়ে গিয়েছিল, যেখান থেকে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব হয়েছিল।

শেয়ার করুন