ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরে টানা ভারি বর্ষণ এবং আকস্মিক ভূমিধসে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ছয়জন বৈষ্ণ দেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে বাড়িঘর ধসে ও আকস্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে। এই ঘটনায় পুরো অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) জম্মু-কাশ্মিরের দোদা বিভাগে প্রবল বর্ষণের ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভূমিধসে রাস্তা ও পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈষ্ণ দেবী মন্দিরের পথে আকস্মিকভাবে পাহাড় ধসে পড়লে যাত্রাপথে থাকা ছয়জন ভক্তের মৃত্যু হয়। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহতদের উদ্ধারে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে আপাতত বৈষ্ণ দেবী মন্দিরে তীর্থযাত্রা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার ভক্তের যাত্রা স্থগিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দোদা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। কিছু জায়গায় বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এক পরিবারের দুজন ঘর চাপা পড়ে প্রাণ হারান। একই সঙ্গে আকস্মিক বন্যায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এক এলাকায় মেঘ বিস্ফোরণের (ক্লাউডবার্স্ট) তথ্যও পাওয়া গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনগণকে নদীর পাড়, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি সড়ক এবং নিম্নাঞ্চল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্ধারকারী বাহিনী এবং সেনা সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে জাতীয় মহাসড়ক-২৪৪-এর একটি বড় অংশ ভেঙে পড়েছে। রাস্তায় বড় বড় পাথর পড়ে যাওয়ায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শুধু যাত্রী নয়, পণ্য পরিবহনেও বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় গ্রামীণ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে দুর্গম এলাকায় আটকা পড়েছেন বহু মানুষ।
জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “জম্মুর অবস্থা সত্যিই খারাপ। আমি নিজে শ্রীনগর থেকে পরবর্তী বিমানে করে জম্মুতে যাচ্ছি, যাতে পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনা করতে পারি।”
এদিকে, প্রবল বৃষ্টির কারণে জম্মু অঞ্চলের প্রধান দুটি নদী তাওয়াই ও রবির পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রামীণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি এবং স্থানীয় অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রবল বর্ষণ, ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার কারণে জম্মু-কাশ্মিরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। উদ্ধারকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বর্ষণের কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মিরে বৃষ্টি ও ভূমিধসের এই সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কীভাবে মুহূর্তেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের প্রাণহানি রোধে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলে সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণে আরও সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।