রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অটোমেশন না আসা পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা স্থগিত: এনবিআর চেয়ারম্যান

অটোমেশন না আসা পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা স্থগিত: এনবিআর চেয়ারম্যান

বাংলাদেশে রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এনবিআর এবার ভ্যাট নিরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ‘‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা আর হবে না।’’

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী মহল, অর্থনীতিবিদ এবং নীতি গবেষকরা অংশ নেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন, তাদের হয়রানি করার জন্য ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে। বরং উদ্দেশ্য হলো ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।’’ তার মতে, আধুনিক ভ্যাট ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে নিরীক্ষার মতো পদক্ষেপ আর প্রয়োজন হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা চাই একক ভ্যাট হার কার্যকর করতে। কিন্তু ব্যবসায়ী মহলই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বাধা দেয়।’’ বর্তমানে করদাতারা অনলাইনে নিজস্ব সিস্টেম থেকেই ভ্যাট পরিশোধ করতে পারেন, কিন্তু এখনও পুরোনো ধ্যানধারণার কারণে এ সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আবদুর রহমান খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন, করছাড় নীতি প্রায়ই অপব্যবহারের শিকার হয়। ‘‘আমরা বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে আট বছরের জন্য কর ছাড় দিই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেটি দশকের পর দশক চলতে থাকে। ফলে দেশের রাজস্ব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ে,’’ তিনি বলেন।

রাজস্ব প্রশাসনের জটিলতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। ‘‘নীতিনির্ধারণে এত সময় চলে যায় যে বাস্তবে রাজস্ব সংগ্রহের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমি বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’’

এছাড়া, ন্যূনতম করহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটি আসলে একটি কালাকানুন। ভবিষ্যতে অবশ্যই এটি বাতিল করা হবে। তবে আপাতত রাজস্ব আয় ধস নামার ঝুঁকি থাকায় এখনই এটি প্রত্যাহার সম্ভব নয়।’’

সংলাপে অংশ নেওয়া গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ী সমাজে স্বস্তি আনবে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের ওপর চাপ থাকবে যে দ্রুততম সময়ে অটোমেশন কার্যকর করতে হবে। নতুবা রাজস্ব আহরণে বড় ফাঁকফোকর তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশি ঋণ ক্রমেই বাড়ছে, এ সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণই হবে দেশের টেকসই অর্থনীতির মূল ভরসা। তাই এনবিআরের সংস্কার পরিকল্পনাগুলো যেন দ্রুত কার্যকর হয়, সেদিকেই নজর দিতে হবে।

শেয়ার করুন