এক নজরে বাংলাদেশ রিপাবলিকান ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যর্ন্ত দলটির সংগ্রামের ধারা : ঘুষ-দূর্নীতি ও মাদক নির্মূল বন্ধের আন্দোলন। ভোটের আন্দোলন। চাউল গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমানোর আন্দোলন। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্যা, মানবতা, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশগ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে শহিদ আবু সাঈদের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া ও পরিবারের হাতে নগদ ১ লক্ষ টাকা অনুদান তুলেদেন । ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ও ৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙ্গে শাহবাগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন। শহিদ আবু সাঈদের স্বরণে ইফতার মাহফিল ও প্রথম মৃত্যুবাষির্কী পালন করে সারাদেশে কমিটি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশা : দীর্ঘ ১ যুগ আন্দোলন ও মামলা মোকাদ্দমার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিবন্ধন পাওয়া দল হিসেবে দেশবাসিকে ১২তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কীর অভিনন্দন জানান দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি অংশাবিশেষ। ভবিষ্যতে ক্ষমতার নামে যারা মানবিধকার, বাক-স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র হরণ করবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ লড়াই আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল নয় জনগণের ভোট ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ধ্বংস হবে এই পন্থা চায় বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি। আর গণমানুষের অধিকারই আমাদের শক্তি।” যারা রাজাকার, জঙ্গী, দোসর এই শব্দগুলো ব্যবহার করে তারা দেশকে বিভাজন করে নিজ স্বার্থের জন্য গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়। এদেশ আমার আপনার সবার। আর সবার ওপরে দেশের জনগণের মতপ্রকাশ ও স্বাধীনতা। পারস্পারিক মায়ার বন্ধন ও শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও বিভিন্ন পেশাজীবির অবসরপ্রাপ্ত ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির দলে সংযুক্ত ও হাতি মার্কায় নির্বাচন করতে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী :- বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি একটি আদর্শিক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম যা নিরন্তরভাবে একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। যেখানে থাকবে না, হিংসা, ভেদাভেদ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও মিথ্যা হামলা-মামলার রাজনীতি। বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি চায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশে স্বাধীনতা, সকলের জন্য আইনের সমান-সুশাসন, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিপ্লব।
দলের সূচনা ও চেয়ারম্যানের পরিচিতি :- বাংলাদেশ রিপাবলিকান পাটির চেয়ারম্যান কে.এম আবু হানিফ হৃদয় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা বিশনন্দী ইউনিয়ন গাজীপুরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি একজন সংবাদকর্মী ও কথাসাহিত্যিক। তিনি ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ১% ভোটের যাচাই-বাছাইয়ে স্বৈরাচারী আচরণের স্বীকার হন। এই বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে আব্রাহাম লিংকনের ব্যর্থ জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি দিয়ে বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশ রিপাবলিকান পাটির নিবন্ধন আবেদন :- বাংলাদেশ রিপাবলিকান পাটি ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের সকল শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন আবেদন বাতিল করে দেন। ইতিহাস জেনে রাখা ভাল, কমিশনার নুরুল হুদার অধীনে দ্বাদশ নির্বাচন উপলক্ষে নিবন্ধনের জন্য ৭৬টি দল আবেদন করেন। তিনি ৭৬টি দলকেই নিবন্ধন না দিয়ে বাতিল করে দিনের ভোট রাতে করেন। নির্বাচন কমিশনের বাতিলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান কে.এম আবু হানিফ হৃদয় কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রীট করলে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কে.এম হাফিজুর রহমানের আদালত বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টিকে কেন নিবন্ধন দেয়া হবে না এই মর্মে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেন। নিবন্ধনের মামলা কাঁদে নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে, ১% ভোটের যাচাই-বাছাইয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার তার ২টি মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
আব্রাহাম লিংকনের জীবনী :- এবারও তিনি ব্যর্থ হলেন, পুনরায় পড়লেন। যেখানে আব্রাহাম লিংকন ৫০ বছর ব্যর্থ জীবন কাটিয়ে মৃত্যুর ৪ বছর পূর্বে রিপাবলিকান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাহলে আর হতাশা নয়? সফলতার আত্মবিশ্বাসে নিবন্ধন মামলার লড়াই নতুন শুরু করলেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে ম্যানশন, তালিকা অন্তর্ভূক্তিকরণ, ফিক্সড করা, পার্ট শুনানী করে কোর্ট ভেঙ্গে যাওয়াসহ নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। এবারও তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি দৈনিক বাংলার চোখের সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে জেলা সমিতির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে ঘনিষ্ঠতা। তিনি তার দলকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে জোটগতভাবে ঢাকা-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-২ মনোনয়নপত্র দাখিল করার ব্যবস্থা করেন।
অতঃপর তিনি আওয়ামী সরকারের দলীয় প্রার্থীর হামলা-মামলা মোকাবেলা করে নির্বাচন করা সমম্ভব নয় বলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। শতাধিক মূলধারার গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে আজ্ঞাবহ কমিশন, গণতন্ত্র হরণ ও প্রহশনের ডামি নির্বাচনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখান করেন। তারপর তিনি প্রশাসনের হুমকি ও সরকারের গ্রেফতার গুম-খুনের ভয়ে ৬ মাস আত্মগোপনে থাকেন।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম :- দীর্ঘ ১২ বছরের হামলা-মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে ভোট চোর অভিশপ্ত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগটি সশরীরে এবং অর্থ দিয়ে ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। তিনি আলেম ওলামাদের হত্যা, নির্যাতন, গুম, বিরোধীমত দমনের স্মৃতিময় জ্বালা থেকে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড অফিসে ক্যাম্প গঠন করেন। নিজের জীবন ও সন্তানের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনকে উজ্জ্ববিত করতে ১৯ জুলাই দাফনের দ্বিতীয় দিন প্রথম শহিদ আবু সাইদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে কবর জিয়ারত, ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও তার পরিবারের হাতে নগদ ১ লক্ষ টাকা তুলে দেন, এবং পরিবারের সারাজীবন দায়িত্বসহ কবরস্থানটি পাকা করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে সরকারি ভাবে ঘোষণা থাকায় শহিদের বড় ভাই আবু হোসেনের অনুরোধে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ রিপাপলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেকোনো গুম, হত্যা, দুর্যোগ, মানবতা, অসহায়দের পাশে নিরলসভাবে কাজ করেন। কিন্তু সেইদিন শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতে এসে গ্রেফতারের বিপদ সংকেত শুনতে পান।
রংপুরের ডিআইজির গ্রেফতার এড়াতে দুই সন্তান, সফর সঙ্গী ইমন তালুকদার ও ড্রাইভার মেহেদিকে নিয়ে দ্রুত অন্ধকার নিরব নিস্তব্দ রাস্তা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসলে আটকা পড়েন। সেইদিন রক্তাক্ত রাস্তা, ব্যারিকেড দিয়ে ঢাকার প্রবেশ মুখ বন্ধ ছিল। বিকল্প রাস্তা আশুলিয়া-উত্তরা দিয়েও ঢাকার প্রবেশ মুখ বন্ধ ছিল জানতে পারেন। রাস্তায় পুলিশ-র্যাব-সেনাবাহিনীর টহল দেখে একটি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়ে টিভির স্কলে দেখতে পান, একটু পর ১২.১ মিনিট থেকে কারফিউ চলবে। সরকারের নির্দেশ রাস্তায় লোক দেখলেই গুলি করবে। না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে সারারাত গাড়িতে ও হাসপাতালের ডেস্কে কাটানো ছিল এক ভয়ংকর রাতের ইতিহাস। তারমধ্যে ১৯ জুলাই বিকেল থেকেই বনশ্রীতে হেলিকাপ্টারের টহল, পুলিশের গুলিতে বাসার গেইটের সামনে দুইজন নিহত, পিআইবি অফিস, থানা ও মসজিদের আশে-পাশে আরো ২০/২৫জন নিহত হয়েছে জানতে পারেন।
পুলিশ-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষের ভয়ে বাসায় থাকা মুঠো ফোনে স্ত্রী ও শিশু কন্যা রাজকুমারীর আর্তনাৎ ছিল বাঁচাও বাঁচাও এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। আর গাড়িতে বসে দুই ছেলে ভয়ে ও শীতে নিরব-নিস্তব্দতায় কাঁপছিল, সেইদিন রংপুর থেকে ঢাকার রাস্তাটি ছিল কালো ধোয়ার গন্ধে অন্ধকার আচ্ছন্ন এক মরণ ফাঁদ। দোকান পাট বন্ধ ছিল, রাস্তায় কোন মানুষজন ছিল না এভাবেই বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন এবং ভবিষ্যতেও যে কোনো ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে করবে। পরবর্তীতে অফিসের ১৮ লাখ টাকার ক্যামেরা, সিপিও, ল্যাপটপসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তারপরেও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ ঘোষিত ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অংশগ্রহণ, ৫ আগস্ট সপরিবারে পুলিশ-সেনাবাহিনীর গুলির ভয় অপেক্ষা করে সকাল ১০টার মধ্যেই মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করতে শাহবাগে সবার আগে উপস্থিত হওয়াটা ছিল শিক্ষার্থীদের সাথে জীবনকে উৎসর্গ করা।