শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ষষ্ঠীপূজার সঙ্গেই রাজশাহীতে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

ষষ্ঠীপূজার সঙ্গেই রাজশাহীতে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

অপু দাস (স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী) :

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। রোববার সকাল থেকেই রাজশাহীর মণ্ডপগুলোতে ভক্ত-অনুরাগীদের ঢল নামে। ঢাক-ঢোলের শব্দ, ধূপ-ধুনোর গন্ধ আর ভক্তিমূলক গানের সুরে মেতে ওঠে শহর ও গ্রাম।

লোককথা মতে, এসময় দেবী দুর্গা স্বর্গলোক থেকে কন্যারূপে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন মর্ত্যে। এ আগমনকে কেন্দ্র করে বাঙালির ঘরে ঘরে তৈরি হয় মিলনমেলা।

ধর্মীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবারের দুর্গোৎসবে দেবী দুর্গা এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে এবং বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) করে। পুরাণ মতে, হাতি বাহনে আগমন মানে শান্তি, সমৃদ্ধি ও শুভফল। অন্যদিকে পালকি দিয়ে বিদায় মানে বিষাদ—যা দেবীর বিদায়ের বেদনা হিসেবে ধরা হয়।

রোববার সকাল সোয়া ৯টার আগে রাজশাহীর বিভিন্ন মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সন্ধ্যায় হবে আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে শুরু হলো চার দিনের পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এবার রাজশাহী জেলায় মোট ৪৭০টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে নগর এলাকায় ১০৩টি এবং উপজেলাগুলোতে ৩৬৭টি। প্রতিটি মণ্ডপেই চলছে আলোকসজ্জা, রঙিন তোরণ নির্মাণ, প্রতিমা সাজানোসহ শেষ মুহূর্তের কাজ।

পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি মণ্ডপে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নগরজুড়ে রয়েছে টহল ব্যবস্থা। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে রাজশাহীতে এখন উৎসবের আমেজ। শহরের মার্কেটগুলোতে পোশাক, গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। মিষ্টির দোকানেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা।

শিশুদের হাতে নতুন জামা, তরুণদের হাতে ক্যামেরা—সব মিলিয়ে নগরজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজশাহীতে শত বছরের পুরনো অনেক মণ্ডপ আজও ঐতিহ্য বহন করছে। এসব মণ্ডপ শুধু পূজা নয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আর্ট প্রতিযোগিতা, আরতি নৃত্য আর ভক্তিমূলক সংগীতেরও কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

দুর্গোৎসব ঘিরে স্থানীয় অর্থনীতিও প্রাণ ফিরে পায়। প্রতিমা শিল্পী থেকে শুরু করে আলো-সাজসজ্জা ব্যবসায়ী, পোশাক ব্যবসায়ী, ফুল বিক্রেতা, মিষ্টির দোকানদার—সবারই ব্যবসায় গতি আসে এই সময়ে। শুধু নগর নয়, গ্রামীণ হাটবাজারেও পূজা উপলক্ষে বেচাকেনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

শারদীয় দুর্গোৎসব এখন কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ ভিড় জমায় পূজা মণ্ডপে। ভক্তি, আনন্দ ও মিলনের এ উৎসব তাই সবার জন্যই হয়ে ওঠে অনাবিল আনন্দের উপলক্ষ।

শেয়ার করুন