ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আজও সড়ক অবরোধ করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চলমান আন্দোলনের মুখে ২৮ অক্টোবরের নোটিশে ২৯ অক্টোবর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যার এক নোটিশে বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা ম্যারিয়ট কনভেনশন সেন্টারের সামনে জড়ো হন। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের একপাশের যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের অন্যতম দাবি ছিল অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি। এজন্য তারা সড়ক অবরোধ করেছে।
এর আগে সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। যেখানে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেণ। পরে বিকেল ৩টার পর কলেজের মূল ফটক খুলে নিচ তলায় কন্ট্রোল রুমে থাকা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা। সেসময় সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় তলায় উঠতে চাইলে সেনাবাহিনী ভেতর থেকে গেট বন্ধ করে দেয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গতকাল সন্ধ্যায় কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজি নেয়ামুল হকের সই করা নোটিশে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়।
ওই নোটিশে বলা হয়, ঢাকা সিটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-
১. ছাত্রদের গালিগালাজ করার কারণে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
২. কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সুমনের বহিষ্কারের কারণ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে অতি দ্রুত তাকে কর্মে যোগদান করানো হবে।
৩. এর আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রিটেইক বাবদ যে ফি নেওয়া হয়েছে তা ফেরত দেওয়া হবে। বিশেষ ক্লাস বা কোচিংয়ের জন্য কোনো ফি নেওয়া হবে না।
৪. আন্দোলনকারী কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
৫. পিকনিকের ব্যাপারে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৬. কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবককে হয়রানি বা অপমান করা হবে না।
নোটিশে আরও বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন বন্ধ করে কলেজের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আবেগ এবং অনুভূতিকে সবসময়ই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে একই দিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদাভাবে স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে সিটি কলেজ ও সায়েন্সল্যাব মোড় পাসাপাশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এই এলাকার যানচলাচল। তবে জরুরি রোগী পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।