জোরপূর্বক কোনো শিক্ষককে পদত্যাগ করানো যাবে না- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা থাকলেও এমন ঘটনা কোনোভাবে থামছে না। এবার খোদ রাজধানীতে ঘটেছে শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা। টিকাটুলীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জোবায়দা খানমকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খণ্ডকালীন কয়েকজন শিক্ষক কিছু শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের নিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ জোবায়দা খানম। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জোরপূর্বক অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করানোর সঙ্গে জড়িতরা হলেন- সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, আকলিমা আক্তার, রেখা মণ্ডল দীনা, রাজিয়া সুলতানা, নুসরাত জাহান। জড়িতরা সবাই প্রতিষ্ঠানটির নন-এমপিও এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ঘটনায় জড়িতরা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও গভর্নিং বডির সভাপতি রাসুলুল হক শাহীনের সময়ে খণ্ডকালীন সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া। আওয়ামী লীগের আমলে এ শিক্ষকরা খণ্ডকালীন হলেও বেশ দাপটের সঙ্গে চলতেন। প্রতিষ্ঠানের নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজেও তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও গভর্নিং বডির সদস্য রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে এ শিক্ষকদের কারও কারও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এসব নেতার সঙ্গে ছবিও আছে।
জানা গেছে, বর্তমান অধ্যক্ষকে তার পদ থেকে সরানোর জন্য গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করা হয়। এজন্য ‘প্রজাপতি’ নামে হোয়াটসআপে একটি গ্রুপও খোলা হয়। যেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতেন। কীভাবে শিক্ষার্থীদের অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা হবে, ম্যানেজিং কমিটি এবং অভিভাবকদের সক্রিয় রাখা যাবে সেসব বিষয় আলোচনা করা হতো। এমন বেশকিছু হোয়াটসআপের আলাপ এ প্রতিবেদকের সংরক্ষণে আছে।
প্রতিষ্ঠানটির একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ অনেক ভালো। সহজ-সরল মনের মানুষ। কিন্তু কিছু খণ্ডকালীন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে এই পরিস্থিতির তৈরি করেছেন। তারা কয়েক মাস ধরে নিজেদের মধ্যে করণীয় ঠিক করতে কাজ করেছেন। আজ (সোমবার) চূড়ান্ত করেছেন জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর মধ্যদিয়ে। এদের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অধ্যক্ষ টিকতে পারেন না।
অধ্যক্ষ জোবায়দা খানম বলেন, খণ্ডকালীন এসব শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন রাজনীতির জোরে। তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই, পরীক্ষাও দেননি। পরে তারা যখন যে সভাপতি আসেন, তার সঙ্গে খাতির জমিয়ে দাপটের সঙ্গে চলেন। যেহেতু এমপিওভুক্ত নন তাই কোনো নিয়মেরও ধার ধারেন না এই শিক্ষকরা।