সংলাপ নিয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হোক সেটি যুক্তরাষ্ট্র চায় বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।

তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে র‌্যালি করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সংহিসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।

উজরা বলেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব। মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, মানবপাচার রোধের বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।

উজরা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা চাউর হচ্ছে- এ বিষয়ে উজরার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যা বলতে চাইছেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।

উজরা জেয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় জানিয়ে উজরা বলেন, গত ৫ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বোঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। গতকাল আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৭৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছেন উজরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য আমি ৭৪ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করছি। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে অন্যান্য দাতা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মত প্রকাশ করেন উজরা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।

বৈঠকে ওয়াশিংটনের পক্ষে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও এবং দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আজ সকালে প্রথমে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা জেয়া। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কথা হয়নি। এ বিষয়ে তারাও জিজ্ঞেস করেননি, আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আগেও যে কথা বলেছি, আজও তাদের সেসব কথাই বলেছি। আমি আগে যেমন বলেছিলাম ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সেপ্টেম্বরের মধ্য সংশোধন হবে, আজও তাদের সে বিষয়টিই প্রকারান্তরে জানিয়েছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। গতকাল (বুধবার) দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ) যে বড় একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল সেটা নিয়েও তারা প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের সবই তৈরি আছে। এছাড়া ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের স্পেশাল কিছু বাহিনীকে তারা যে সহযোগিতা করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে সে বিষয়েও মনে করিয়ে দিয়েছি। এটিই ছিল আজকের আলোচনার মূল সারমর্ম।

আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবে উজরার নেতৃত্বাধীন মার্কিন দলটি।

এর বাইরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে প্রতিনিধি দলটির।

চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। মার্কিন দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। প্রতিনিধি দলটি বুধবার (১২ জুলাই) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন তারা।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুক্রবার (১৪ জুলাই) ঢাকা ছাড়বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ