বরিশালে আরো বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সব শেষ বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী গতকাল বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৫২ জন রোগী।

চিকিৎসাধীন রোগীদের রয়েছে নানা সমস্যা ও সংকট। ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে সাধারণ রোগীদের পাশে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে অন্য রোগীদের মাঝে। ভুক্তভোগীরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালুর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে স্থান সংকটের কারণে ডেঙ্গু রোগীদের একই ওয়ার্ডে আলাদা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার শেবাচিম হাসপাতালের ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী। এর আগে গত মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন ছিলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ জন, সোমবার ৪৬ জন এবং গত রবিবার চিকিৎসাধীন ছিলো ৪১ জন রোগী।
গতকাল সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্য সাধারণ রোগীদের পাশেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। মশাবাহিত রোগ হলেও ডেঙ্গু রোগীদের মশারিতে ঢেকে রাখা হয়নি। কর্তৃপক্ষ রোগীদের মশারি দিলেও স্ট্যান্ড না দেয়ায় ওয়ার্ডে মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে বসা মশা অন্য কারোর শরীরে কামড় দিলে তাদেরও ডেঙ্গু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালুর দাবি জানিয়েছেন মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগীরা।

নোংরা-দুর্গন্ধময় মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে হাসপাতালের নির্জন পরিবেশ উবে গেছে। মেঝেতে এবং বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের জন্য নেই কোন বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। এ কারণে হাতপাখা ব্যবহার করে তীব্র গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন রোগীরা। প্রতিটি ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী এবং তাদের কয়েক শ’ স্বজনের জন্য একটি করে টয়লেট-বাথরুম থাকায় টয়লেট ব্যবহার করতে হয় লাইন ধরে। তাও নোংরা। এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীরা স্থানীয় ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাসিন্দা এবং ঢাকা থেকে আগত। ওয়ার্ডে তাদের মশারি দেয়া হয়েছে। একই ওয়ার্ডে আলাদা কর্নার করে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। তবে শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র না থাকায় গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের ঢাকায় প্রেরণ করতে হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ‘সেল সেপারেটর’ অত্যাবশ্যকীয়। ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে শেবাচিমে আশঙ্কাজনক ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

গেল জুন মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদুল আজহার পর থেকে ডেঙ্গু রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ