টেলিফোনে কথা বললেন পুতিন-লুকাশেঙ্কো

ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহের অবসানের পরদিন আবারও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রোববার প্রতিবেশি এই দুই রাষ্ট্রনেতা টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বেলটা জানিয়েছে।

এর আগে, ওয়াগনারের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর শনিবার অন্তত দুবার টেলিফোনে কথা বলেন আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ও ভ্লাদিমির পুতিন। তবে রোববার তাদের মধ্যে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে সেই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও তথ্য জানায়নি বেলটা।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েভগেনি প্রিগোজিন নেতৃত্বাধীন ওয়াগনারের সৈন্যরা দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর পক্ষে লড়াই করছে। সেখানে সবচেয়ে নৃশংস লড়াইয়ের জন্য কুখ্যাত হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে এই বাহিনী।

শনিবার আকস্মিকভাবে ওয়াগনার প্রধান রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে সাঁজোয়া যানসহ সৈন্যদের একটি বহরকে মস্কোর দিকে পাঠিয়ে দেন। ওয়াগনারের যোদ্ধারা প্রথমে অধিকৃত পূর্ব-ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-দনে ঢুকে পড়েন।

তারপর মস্কোর পথে ভরোনেজ হয়ে মূল সড়কপথ ধরে অগ্রসর হতে থাকেন। এই ঘটনাকে ইউক্রেনে রাশিয়ার ১৬ মাসের পুরোমাত্রার যুদ্ধের মুহূর্তকে সংজ্ঞায়িত করছে বলে মনে করা হচ্ছিল।

অনেকেই বলছিলেন, যুদ্ধ এখন পুতিনের দরজায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু ওয়াগনারের সামরিক বহর মস্কোর উত্তরের দিকে পৌঁছানোর সাথে সাথে একটি চুক্তির খবর আসে। আর অনেকটা অদ্ভুতভাবে এই চুক্তিও হয় বেলারুশ নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায়।

পরে ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন মস্কো অভিমুখে যাত্রা করা সৈন্যবহরকে ঘাঁটিতে ফেরার নির্দেশ দেন। ক্রেমলিন বলছে, চুক্তি অনুযায়ী ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন বেলারুশে যাচ্ছেন এবং তিনি কোনও ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি হবেন না। পাশাপাশি তার বাহিনীর যোদ্ধাদেরও সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ ওয়াগনারের সৈন্যদের জন্য যুদ্ধের পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক মাস ধরে তাদের ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রিগোজিন।

আবার ইউক্রেনে যুদ্ধরত ভাড়াটে এই বাহিনীকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে এক চুক্তিতে স্বাক্ষরের সময়সীমার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন পুতিন। কিন্তু ওয়াগনার প্রধান রাশিয়ার সরকারি এই পদক্ষেপকে নিজের প্রভাবের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

গত শুক্রবার (২৩ জুন) দীর্ঘ এক বক্তৃতায় প্রিগোজিন রুশ নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পুরোটাই মিথ্যা আর ছলচাতুরীর ওপর চলছে। ‘বদমাশদের ছোট একটি দল’ নিজেদের প্রচারের জন্য জনসাধারণ ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

এরপর রুশ প্রতিরক্ষা ও সামরিক প্রধানদের সঙ্গে প্রিগোজিনের বিবাদ চরম আকার ধারণ করে। প্রিগোজিন ইউক্রেনে তার সৈন্যদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর দায়ে রুশ সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করেন।

তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামলার প্রমাণ হিসাবে তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। যদিও তাতে কিছুই পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। শুক্রবার ভোরের দিকে তিনি মস্কো অভিমুখে সৈন্যদের ‘ন্যায়ের জন্য পদযাত্রা’ ঘোষণা করেন।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

//এমটিকে

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ