আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, মির্জা ফখরুল তো জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখেন। নির্বাচন নিয়ে বলতে গিয়ে তার মুখের বিষ এত উগ্রো, বলছে কুত্তা মার্কা নির্বাচন। এমন বিশ্রি মন্তব্য, বিষাক্ত কথা একটি দলের মহাসচিবের মুখ থেকে কী করে বের হয়? আমি তাকে (মির্জা ফখরুল) এবং যারা চিঠি দিচ্ছে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, কুত্তা মার্কা নির্বাচন এই শব্দ ব্যবহার করার পরও তাদের ভিসানীতি এখানে কী বলবে? এটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে, অন্তরায়।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) কৃষক লীগের উদ্যোগে তিন মাসব্যাপী (আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র) বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনার সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সংসদ সদস্য এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে শায়েস্তা করতে বলছে। আজ ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যান তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। এই চিঠিগুলোর মর্মকথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বলে। দেশ আমাদের, কিন্তু মাথাব্যথা তাদের। আর কেউ কেউ মনে মনে মনকলা খাচ্ছে। এই বুঝি নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতিতে পড়ল আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে তারুণ্যের মিছিলের নামে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে, এর জবাব আমরা চাই। যারা বিদেশ থেকে আজ ডেকে কথা বলছেন, বৈঠক করছেন তাদের কাছেও জবাব চাই। এই ঘটনার পর তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এটা কী সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় নয়? এই অন্তরা কারা সৃষ্টি করছে? বিএনপির দোসররা। আর যদি এরজন্য গ্রেপ্তার করা হয়, তখন বলবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এসব অভিযোগের অন্ত নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনকে তিনি খারাপ ভাষায় অবহিত করেন। তিনি কি গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, কক্সবাজারের নির্বাচন দেখেননি? এগুলো কি কুত্তা মার্কা নির্বাচন? সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিএনপি বলে কুত্তা মার্কা নির্বাচন। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। ক্ষমা চাইতে হবে আপনাকে (মির্জা ফখরুল)। বঙ্গবন্ধুর ছবি যারা ভেঙেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাদের ক্ষমা নেই।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন- মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়ে সরকারের নাকি হাঁটুর ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির আন্দোলনে উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, বিএনপি একটি হাঁটু ভাঙা দল। আমাদের হাঁটু ভাঙেনি। হাঁটু ভেঙেছে বিএনপির, হাঁটুর কাঁপুনি শুরু হয়েছে বিএনপির। নির্বাচন করলে হেরে যাবে, এই ভয়ে হাঁটুর কাঁপুন শুরু হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, আজ আমাদের বিশ্ব একটি বিপর্যয়কর ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। এই প্রতিক্রিয়ার শিকার আমরাও। আমাদের দেশে সবুজ অনেক কমে গেছে। যেখানে ২৫ শতাংশ সবুজ আবশ্যক, সেখানে আমাদের ৮ শতাংশ আছে। সবুজ বেষ্টনী তথা বৃক্ষ আমাদের এই পরিবেশ বাঁচাতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, আজ কানাডার মতো দেশে দেশে আগুন জ্বলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যের পানির উৎস কলরাডো নদী প্রায় শুকিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লেক হচ্ছে কানাডায়। ইতালিতে ১ হাজার ৫০০ লেক আছে, এর মধ্যে ৫০০টি লেক শুকিয়ে গেছে। আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীতে ভয়ংকর একটি যুদ্ধ হতে পারে পানির জন্য। ওয়্যার অব ওয়াটার। এটি মনে হয় আর বেশি দূরে নেই।
তিনি আরও বলেন, আজ সারা বিশ্বে সবুজ সংরক্ষণে ক্যাম্পেইন চলছে। দেরিতে হলেও অনেকে নজর দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের দেশে যখন অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো ক্ষমতায় এসেছে, তাদের শত্রুর মধ্যে একটি শত্রু ছিল গাছ। তারা বনজ সম্পদ উজাড় করেছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই এ কাজটি করেছে। বৃক্ষকে তারা শত্রু বানিয়েছে। তার মানে পরিবেশকে আমরাই বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছি।
‘আজকে ইকোনোমিস্টের মতো ম্যাগাজিনের সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ১৪০টি দেশের মধ্যে ১৩৭তম অবস্থানে। এটি বসবাসের যোগ্য ও অযোগ্য দেশের সমীক্ষা ছিল। বসবাসের অযোগ্য শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে রাজধানী ঢাকা। অথচ উন্নয়ন ও অর্জনে আমরা বিশ্বের বিস্ময়। কিন্তু আমাদের রাজধানী আজ বসবাসের অযোগ্য। এর মূল কারণ হচ্ছে সবুজ নিধন, বৃক্ষ নিধন। আমাদের নদীগুলো দূষিত। ঢাকার আশপাশের কোনো নদীতে বিশুদ্ধ পানি নেই। ঢাকা শহরের বায়ুর মান খারাপের দিক দিয়ে কোনো কোনো দিন বিশ্বের এক নম্বরে চলে আসে। আমাদের উন্নয়ন ও অর্জনকে এসব পরিস্থিতি লজ্জা দেয়। ’
তিনি বলেন, কৃষি বাঁচলে, কৃষক বাঁচবে, কৃষক বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে- এই স্লোগানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরদার করেছেন। এই স্লোগান তিনি শুধু মুখে ধারণ করেননি, এর বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচি নিয়েছেন। যে কর্মসূচির কারণে, আজ বিশ্বে জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভের ঘাটতি এসবের মধ্যে কৃষি ঠিক আছে বলে বাংলাদেশ ঠিক আছে। কৃষিই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। এটিই সত্য। কৃষিতে যে যুপোযোগি সিদ্ধান্ত নেত্রী বাস্তবায়ন করেছেন, গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করেছে, তার জন্য আজ আমাদের খাদ্য ঘাটতি নেই।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে দেশে এত সংকট। এরমধ্যে আমাদের ওপর কক্সবাজারের ১২ লাখের মতো বিদেশি নাগরিকের (রোহিঙ্গা) ভরণ-পোষণ, আশ্রয়ের দায়িত্ব। আমাদের আত্মত্যাগ এত যে, আমাদের ইকোলজি, আমাদের ট্যুরিজম, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে আমরা সেক্রিফাইস করেছি। তারপরও খবর পাচ্ছি জাতিসংঘ এদের ভরণ-পোষণের প্রয়োজনীয় ফান্ড দিতে পারছে না বলে অপারগত প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি ফান্ডিং কমে গেছে। সিরিয়াতে অর্ধেকের বেশি নেমে গেছে। তাহলে দুনিয়া কোন দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কৃষি ঠিক আছে বলে আমরা অনেক ভালো আছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অনেক দুঃখ, কষ্ট, সংকটের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণসহ তাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। মানবিক কারণে শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কাজেই তাদের আমরা ফেলে দিতে পারি না। কিন্তু মানবতার নামে যে বিশ্ব বড় বড় কথা বলে, তারা কি এটা দেখে না, তারা কি এটা জানে না?
কাদের বলেন, বর্তমান সংকটময় অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন তা বিস্ময়কর। তার জাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আজ জ্বালানীর মতো সংকট, বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সারাবিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে আমরা সামলে যাচ্ছি। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ সংকট বেড়ে গিয়েছিল। আমি আশা করি পাঁচ-সাতদিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। লোডশেডিং অনেক কমে গেছে, আরও কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ লন্ডন, ওয়াশিংটন, জাপান সফর করার পর কয়েকদিনে মধ্যে চলে গেছেন কাতার। কাতারের আমির তাকে আশ্বস্ত করেছেন, জ্বালানির জন্য কোনো সমস্যায় বাংলাদেশকে পড়তে হবে না।
তিনি বলেন, যারা রাজনীতির নামে বড় বড় কথা বলে, মিথ্যাচার করে, বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, বিদেশিদের উস্কে দেয়, তারা চায় বাংলাদেশ আরও কষ্টে নিপতিত হয়। যাতে বাংলাদেশ সক্ষমতার সঙ্গে চলতে না পারে। আজ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও খেলা চলছে, চক্রান্ত চলছে, লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে। তাদের লবিস্ট নিয়োগ করার টাকার অভাব নেই। ক্ষমতা না থাকলেও সেই অর্থ তাদের আছে। লবিস্ট নিয়োগ করে তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরা কারা?
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।
আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মাহবুব-উল-আলম শান্তি, শেখ জাহাঙ্গীর আলম, এস এম আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা, কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম হিরন, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, নুরে আলম সিদ্দিকী হক, নাজমুল হক পানু প্রমুখ।