লোডশেডিং: জুলাইয়ের আগে নেই সুখবরের সম্ভাবনা!

চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি সামলাতে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংকট মেটাতে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ কেনা হবে। বর্তমানে ভারতের আদানি গ্রুপ ৭৫০ থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। তবে সরকার আদানির কাছ থেকে ১০৫০ মেগাওয়াট নিতে চাইছে। রামপাল কেন্দ্র এখন ৩২০ থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট দিচ্ছে। তা বাড়িয়ে ৬১২ মেগাওয়াট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে গোটা বাংলাদেশে যে পরিমাণ লোডশেডিং চলছে, তাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। রাজধানী ঢাকাতেই দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে অবস্থা আরও ভয়াবহ।

অপরদিকে, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য মতে, ৬ জুন দুপুর ১২টায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট। লোডশেড করা হয়েছে মোট ২৬১০ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, আজ সন্ধ্যায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট।

পিজিসিবি পিডিবি দুই সংস্থার তথ্য মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার তথ্য পাওয়া গেলেও বাস্তবে চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থাৎ বাস্তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
এছাড়া ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, টঙ্গী, ভেড়ামারা, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন প্লান্টে ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের জন্য বর্তমানে দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। এর পরিমাণ বাড়াতে গেলে শিল্পে সরবরাহ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গ্যাস, কয়লা ছাড়াও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিভিন্ন কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধির কথাও ভাবছে সরকার। ইতোমধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আবারও উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।

এদিকে দেশজুড়ে লাগামছাড়া লোডশেডিং চললেও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪৫ শতাংশ এখনও অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে আমদানিসহ চালু থাকা ১৪৯টি কেন্দ্রের দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ রয়েছে চারটি কেন্দ্র, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা আরও ৩০৯ মেগাওয়াট। কয়লা সংকটে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উৎপাদন ক্ষমতা নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে।

অপরদিকে, পিডিবিসহ খাত সংশ্লিষ্টরা লোডশেডিংয়ের মূল কারণ হিসেবে উপস্থাপন করছেন ডলার সংকটের কারণে কয়লা সংকট ও তাপপ্রবাহে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিকে। কয়লা সংকটে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটো ইউনিট ২৫ মে ও ৫ জুন বন্ধ হয়ে যায়। ইউনিট দুটো চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সংস্থানের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তবে সে কয়লা এসে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে সময় লাগবে ২৫ দিন। সেক্ষেত্রে জুন মাস জুড়েই লোডশেডিং বজায় থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, আমাদের এখন কিছু ঘাটতি আছে, ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের সর্বশেষ