বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর আগে ভোর থেকে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। সাগরের বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তীরে। কিন্তু এসবের কিছুই পর্যটকদের উচ্ছ্বাস থামাতে পারেনি। বৃষ্টিতে ভিজে, সৈকতের বালুচরে গড়াগড়ি ও হাঁটুপানিতে লাফালাফিতে মেতে ওঠেন তারা।
দুর্গাপূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে। প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গতকাল বিকেল থেকে সৈকতে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। এদিন ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। মাঝে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে আবার ঝরতে থাকে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল বলেন, এবারের প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে তিন লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ হিন্দু ধর্মের। বাকি দুই লাখ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা। দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হওয়ায় অনেকে দেখতে ছুটে এসেছেন কক্সবাজার সৈকতে।
কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, দুর্গাপূজা এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা চার দিনে ছুটিতে অন্তত ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টের ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। তবে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে কেউ যেন অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য বেশি আদায় করতে না পারে, তা তদারকি করা হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এবার জেলার ৯টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় ৩১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে জেলার উখিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও সদর উপজেলার পিএমখালী, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল এলাকার প্রতিমা ট্রাকবোঝাই করে শহরে আনা হয়। পরে পৌরসভার ১১টি মণ্ডপের প্রতিমাসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নেওয়া হয়। বিকেল ৩টায় সৈকতের বিজয়মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। বিকেল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সব প্রতিমা বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে সৈকতে প্রতিমা একটু দেরিতে নামানো হয়েছে।
বিকেলে সৈকতে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তরে সিগাল-লাবনী থেকে দক্ষিণে কলাতলী পর্যন্ত চার কিলোমিটারজুড়ে পর্যটকদের উল্লাস। মেঘলা আকাশ, ঝোড়ো হাওয়া আর মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্তখাল তাদের আনন্দে বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি। ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নেমে উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা।
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল ছিল। তাই চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের সাগরে নামা নিষেধ, কিন্তু কেউ তা মানেননি। তাদের একজন ঢাকা থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আরাফাত ইসলাম। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পানিতে নামার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নোনাজলে গোসল করতে এসেছি। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়ার বিষয়টি জানি। তবে আমি কম পানিতে নামছি।’
সৈকতে পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে চার দিনের ছুটিতে চার-পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব উপভোগ করেছেন। সুন্দর ও নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, সৈকতের তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নজরদারি রাখা হয়েছে।