জলিলুর রহমান জনি (সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি) :
গ্রামীণ হাটে কিংবা শহরের ব্যস্ত রেস্টুরেন্টে গেলে পায়েসের নাম সবার পরিচিত। দুধ, চাল আর চিনির মিষ্টি পায়েস বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। কিন্তু সেই পরিচিত স্বাদের বাইরে গিয়ে অভিনবত্বের ছোঁয়া দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার দুই যুবক—হারুনুর রশিদ ও আশরাফুল।
তাদের হাত ধরে জন্ম নিয়েছে ‘পাঙ্গাস মাছের পায়েস’—এক ব্যতিক্রমী খাবার, যা স্বাদে যেমন অনন্য, তেমনি আয়েও এনেছে বিপ্লব। প্রথমে পরিবারের রান্নাঘরেই শুরু। হারুনুর রশিদ একদিন মজা করে বললেন ভাইকে—“চল, মাছ দিয়ে পায়েস বানাই।” মজার ছলে শুরু হওয়া সেই আইডিয়াই পরবর্তীতে তাদের জীবনের বড় পরিবর্তন আনবে, তা হয়তো তখন ভাবেননি কেউ।
রান্নার ধাপটিও ছিল সৃজনশীল। পাঙ্গাস মাছ পরিষ্কার করে ছোট টুকরো করে ভেজে নেওয়া হয়। এরপর ঘন দুধে চাল, চিনি, বাদাম, কিসমিস আর ঘি দিয়ে রান্না করা হয় মিষ্টি পায়েস। শেষে ভাজা মাছের টুকরা মিশিয়ে পরিবেশন—একেবারেই নতুন এক স্বাদ। শুরুতে পরিবার ও প্রতিবেশীরা অবাক হলেও খাওয়ার পর সবাই মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করেন।
প্রথমবার খাবারটি বানিয়ে ভিডিও তোলেন তারা। সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করার পর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সেটি। আশ্চর্যের বিষয়, ভিডিওটি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে অবিশ্বাস করে মন্তব্য করলেও বেশিরভাগ দর্শক উৎসাহী হয়ে ওঠেন স্বাদ নেওয়ার জন্য। এরপর থেকেই তাদের বাড়িতে শুরু হয় মানুষের ভিড়। আশপাশের গ্রাম থেকে শুরু করে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন শুধু একটি ব্যতিক্রমী স্বাদের পায়েস খাওয়ার জন্য।
চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্যবসায়িকভাবে পাঙ্গাস মাছের পায়েস বিক্রি শুরু করেন দুই ভাই। প্রতিদিনই তাদের দোকানে থাকে ক্রেতার ভিড়। একেক দিন কয়েক হাজার টাকার বিক্রি থেকে শুরু করে এখন মাসে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা। শুধু তাই নয়, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে বিজ্ঞাপন ও দর্শক আয় থেকেও আসছে বাড়তি অর্থ।
যারা প্রথমবার খাচ্ছেন, তাদের মুখে বিস্ময় ও আনন্দ। এক বৃদ্ধ কৃষক মজার ছলে বলেন— “জীবনে মাছের ভর্তা, মাছের ঝোল অনেক খেলাম; কিন্তু মাছের পায়েস খাব ভাবিনি। খাওয়ার পর বুঝলাম—স্বাদ আসলেই দারুণ!”
আরেক তরুণ ক্রেতা জানান— “আমরা ইউটিউবে ভিডিও দেখে এসেছি। সত্যি বলতে, শুরুতে অবিশ্বাস ছিল, কিন্তু খাওয়ার পর মনে হলো বারবার আসতে হবে।
হারুনুর রশিদ ও আশরাফুল বলেন— “মানুষ সবসময় ভিন্ন কিছু খুঁজে। আমরা সাহস করে চেষ্টা করেছি, আর সেটিই আজ আমাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।”
তাদের এই সাফল্য এখন তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার গল্প। গ্রামে বসেই কীভাবে সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ তারা।