বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামী ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই আদেশ দেন।
মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, যারা প্রসিকিউশনের পক্ষে সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এছাড়া প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম ও সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। একই সঙ্গে উপস্থিত রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি প্রদানের কার্যক্রমও চলে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মামলার তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকারের প্রমাণ তুলে ধরেন।
অপর দিকে, আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তিন দিনের যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন। তিনি রাজসাক্ষী ও অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দি খণ্ডন করেন এবং তাদের বক্তব্যকে প্রমাণহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিশেষ করে তিনি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজে বাঁচতে চাইছেন।
বিষয়টি উল্লেখযোগ্য যে, গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭, যার মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকা ও বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ২০২৩ সালের ১০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন করে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করেন।





