জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন মেননের পদত্যাগ দাবিতে শহরের কেন্দ্র পুলিশ বক্স মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেৃ লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা অবস্থান করছিল। এতে প্রধান ৭ টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সড়কগুলো হলো বিমানবন্দর সড়ক, রংপুর রোড, দিনাজপুর রোড, শেরে বাংলা সড়ক, শহীদ সামসুল হক সড়ক, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, কলাহাটি রোড।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে তিনটায় প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহ এসে এখানে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এর আগে তারা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান করছিল। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদের আহ্বানে তারা কিছুক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। কিন্তু ওসি সমস্যা সমাধানে কোন আশ্বাস দিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা আবার সড়কে আসে এবং উল্লেখিত স্থানে অবস্থান নেয়। এসময় সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং বক্তব্য দেয়। তারা জানায়, দফা এক দাবি এক, সভাপতি মেননের পদত্যাগ। কারণ তার স্বেচ্ছাচারীতায় প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এই দ্বন্দ্ব বা সমস্যার দ্রুত সমাধান দাবি করে তারা বলে, আমরা নিয়মিত বেতন পরিশোধ করলেও ১৭০ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন দেয়া দুই মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন এই অমানবিক হটকারী আচরণ? তার এমন প্রতারণামুলক কর্মকাণ্ড ও অনিয়ম দূর্নীতির কারণে পদত্যাগ ও বিচার চাই।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান চৌধুরী মুকুল বলেন, জাকির হোসেন মেনন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করেছে। দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রায় দুই মাস আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি শফিয়ার রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিউর রহমান কে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অব্যাহতি ঘোষণা দিয়েও এখন তিনি তা মানছেন না বা অস্বীকার করছেন। এমনকি ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকীকে সভাপতি ও সিনিয়র শিক্ষক মজিবুর রহমান চৌধুরী মুকুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন মেনন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের লিখিতভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করছেন। এ সংক্রান্ত অনুমোদন পত্রে স্বাক্ষর করছেন না। একারণে গত দুই মাস ধরে আমরা শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন
সিনিয়র শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন মেনন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে গত বছর ৬ আগষ্ট দলীয় দাপটে লায়ন্স ক্লাবের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সভাপতির পদ দখল করেন। পারিবারিক ক্লাবে পরিণত করতে ৪২ জন সদস্যকে জোর করে ড্রোপ আউট করে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কুক্ষিগত করেছেন। নিজের আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দেয়াসহ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সভাপতি ও অধ্যক্ষ পদে তার অনুগতদের বসিয়ে আর্থিক দূর্নীতি শুরু করে।
সভাপতির সম্মানীর নামে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা পকেটস্থ করাসহ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের অন্যায়ভাবে শোকজ ও হেনস্তা করেন। দুই জনকে সিনিয়র শিক্ষককে জোর করে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা তথ্য প্রমাণসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দুই দফা তদন্ত করা হয়। কিন্তু এসময় তদন্তদলকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে অসহযোগীতা করেন। এমনকি অভিভাবক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্ততায় অচলাবস্থা দূর করতে বার বার অনুরোধ করার পরও ক্লাব সভাপতি ভ্রুক্ষেপ করছেন না। বরং জটিলতা বাড়ানোসহ প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমরা বেতন না পেয়ে চরম দূরাবস্থায় পড়েছি। বাধ্য হয়ে আমরা পথে নেমেছি। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবোনা। শিক্ষার্থীরা আগের মতই স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা দূর্নীতিবাজ ক্লাব সভাপতি ও যুবদল নেতা জাকির হোসেন মেননের পদত্যাগ দাবি করছি।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি পৌর প্রশাসক নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, অচলাবস্থা দূর করতে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি লায়ন্স ক্লাবের অধিনস্থ হওয়ায় তাদের বাইরে কিছু করা যাচ্ছেনা। কারণ লায়ন্স ক্লাব স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এব্যাপারে সৈয়দপুর লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন মেননের সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোন বার বার কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সংবাদ কর্মীদের কল রিসিভ না করায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।





