আব্দুর রহিম রানা, যশোর প্রতিনিধি :
“কৃষিই সমৃদ্ধি”—এই শ্লোগানকে ধারণ করে যশোরের মনিরামপুরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নত মানের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের রবি মৌসুমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে উপজেলা কৃষি অফিস প্রাঙ্গণে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বিথি’র সভাপতিত্বে এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার তবিবুর রহমান’এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শারমিন শাহনাজ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ শাহরিয়া হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস, অচিন্ত্যকুমার ভৌমিক, মোজাফফর হোসেন, হাফিজুর রহমান, হাসানুজ্জামান, হাসিনা নাহার, প্রদীপ দাস প্রমুখ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ বছর মনিরামপুর উপজেলার ৫৬০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসলের বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করা হবে। কৃষকদের মাঝে গম, সরিষা, মসুর, অড়হর, সূর্যমুখী, শীতকালীন পেঁয়াজ এবং বোরো ধান (উফশী জাত) এর উচ্চফলনশীল বীজসহ ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হচ্ছে।
কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বিথি জানান, “সরকারের এই প্রণোদনা কর্মসূচি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা বিনামূল্যে মানসম্মত বীজ ও সার পেয়ে তাদের উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথ আরও সুগম হবে।” বক্তারা বলেন, সরকার কৃষির সার্বিক উন্নয়নে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা আজ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি—এই খাতের উন্নয়নই দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। রবি মৌসুমে বিভিন্ন ফসল চাষে প্রণোদনা পেয়ে কৃষকরা নতুন উদ্যমে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে—কৃষকের পাশে থাকা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে কৃষক আজ আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী।” তিনি আরও বলেন, “কৃষকরা যদি সঠিকভাবে এই বীজ ও সার ব্যবহার করেন, তবে এ মৌসুমে ফসলের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষকরা জানান, বিনামূল্যে বীজ ও সার পাওয়ায় তাদের উৎপাদন ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে। কৃষক মোঃ আব্দুল গফুর, রহিমা খাতুন ও রজব আলী বলেন, “এ ধরণের সহায়তা আমাদের মতো প্রান্তিক চাষীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এতে একদিকে খরচ কমবে, অন্যদিকে ফলন বাড়বে।”
কৃষি বিভাগ জানায়, সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে এই ধরনের প্রণোদনা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই কর্মসূচি মনিরামপুরে কৃষি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামীতেও কৃষকদের আরও উন্নত জাতের বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।অংশগ্রহণকারী কৃষকরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “গ্রামীণ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে এ ধরনের প্রণোদনা কর্মসূচি নিয়মিতভাবে চলমান থাকা প্রয়োজন।”এভাবেই মনিরামপুরের মাঠজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন রবি মৌসুমের প্রস্তুতি, যেখানে কৃষকরা নতুন আশায় বুক বেঁধে আরও সবুজ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন।





