বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মনিরামপুরে দুম্বার মাংস বিতরণে গরমিল: ১২০ প্যাকেটের হদিস নেই

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
যশোরের মনিরামপুরে সৌদি সরকারের পাঠানো দুম্বার মাংস বিতরণে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম ও রহস্যজনক গরমিল। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের (পিআইও) মাধ্যমে ৫০টি মাদরাসা ও এতিমখানায় এই মাংস বিতরণ করা হলেও, সরবরাহ ও বিতরণের হিসাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অমিল ধরা পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকারের সৌজন্যে মনিরামপুরে মোট ৪৭ কার্টুন দুম্বার মাংস এসেছে। প্রতিটি কার্টুনে ১০ প্যাকেট করে মাংস থাকার কথা, অর্থাৎ ৪৭ কার্টুনে মোট ৪৭০ প্যাকেট মাংস থাকার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হোয়াটসঅ্যাপে যে তালিকা সরবরাহ করেছেন, সেখানে দেখা গেছে ৫০টি মাদরাসায় বিতরণ করা হয়েছে মোট ৩৫০ প্যাকেট মাংস। হিসাব অনুযায়ী বাকি ১২০ প্যাকেট মাংসের কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও সাইফুল ইসলাম বলেন, সব কার্টুনে সমানসংখ্যক প্যাকেট ছিল না; কোনো কোনো কার্টুনে ১০টির পরিবর্তে ৭ বা ৮টি প্যাকেট ছিল। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন— সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রেরিত সিল করা কার্টুনে প্যাকেটসংখ্যা কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? অনেকেই মনে করছেন, এই ব্যাখ্যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং পুরো বিতরণ প্রক্রিয়াতেই অস্বচ্ছতা রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকটি মাদরাসা থেকে পাওয়া তথ্যেও দেখা গেছে, তালিকায় যে সংখ্যক প্যাকেট উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তার সঙ্গে মেলে না। কোথাও বেশি, কোথাও আবার কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের মাদরাসায় মাংস এসেছে, কিন্তু প্যাকেটের সংখ্যা তালিকার সঙ্গে মিলছে না। মনে হচ্ছে কোথাও গরমিল হয়েছে।”
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশি সহায়তার বণ্টনে এমন অসঙ্গতি প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দেবে। তাদের দাবি, এই মাংস বিতরণের পুরো প্রক্রিয়াটি তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করতে হবে। জনসাধারণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি দপ্তরের কাজে এই ধরনের অনিয়ম শুধু প্রশাসনিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতাও নির্দেশ করে।
পিআইও অফিস থেকে সরবরাহকৃত তালিকা অনুযায়ী মনিরামপুর উপজেলার ৫০টি মাদরাসা ও এতিমখানা দুম্বার মাংস পেয়েছে বলে উল্লেখ আছে। তবে এই তালিকায় উল্লেখিত সংখ্যক প্যাকেট তারা প্রকৃতপক্ষে পেয়েছে কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। অনেকেই বলছেন, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলেই প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবে।
স্থানীয় সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদরা বিষয়টি স্বচ্ছ তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, বিদেশি সহায়তায় আসা এতিমখানার খাদ্যসামগ্রী যদি বিতরণের সময়ই গরমিলের শিকার হয়, তবে সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও দুঃখজনক।
এখন মনিরামপুরবাসীর প্রশ্ন— ৪৭ কার্টুনে আসা ৪৭০ প্যাকেট দুম্বার মাংসের মধ্যে তালিকায় উল্লেখ থাকা ৩৫০ প্যাকেটের বাইরে বাকি ১২০ প্যাকেটের গন্তব্য কোথায়? সৌদি সরকারের নির্ধারিত হিসাব বিশ্বাসযোগ্য, না কি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ব্যাখ্যা— সেটিই এখন তদন্তের বিষয়।
শেয়ার করুন